স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা জানা গেছে, সামান্য বৃষ্টি হলেই পাকা সড়কে পানি জমে। সেই পানি দু-এক দিনের মধ্যে নামে না। পানিনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পানি জমে কাদাযুক্ত হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুম এলেই এ দুর্ভোগের পড়েন ওই সড়কে চলাচলকারী লোকজন ও যানবাহনের চালকেরা। অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা ও নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করায় এ দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। গতকাল ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাত থেকে ৬ অক্টোবর শুক্রবার সাভার পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভার সিআরপি রোড, জালেশ্বর, আড়াপাড়া, ব্যাংক কলোনি, বাজার রোড, উলাইল, গেন্ডা, ও রাজাসন এলাকার বিভিন্ন সড়কের কয়েকটি স্থানে পানি জমে আছে। অধিকাংশ সড়কই খানাখন্দে ভরা। ঝুঁকি নিয়ে চলছে রিকসা ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পরিবহন।
পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের সিআরপি রোডে গিয়ে দেখা যায় পুরো সড়কটিতেই হাটু সমান পানি জমে আছে। আর এতে সড়কটি ধরে চলচলকারীদের পরতে হয়েছে দুর্ভোগে বিশেষ করে সিআরপিতে সেবা নিতে আসা রোগীদের। এদিকে সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে রিকশা চালকরাও সেদিকে যেতে চাচ্ছেনা। আর গেলেও ভাড়া হাঁকাচ্ছেন কয়েকগুণ বেশি। অন্তরা জাহান নামে সিআরপিতে চিকিৎসা নিতে আসা একজন জানান, ব্যাকপেইনের সমস্যাজনিত কারণে আমার রেগুলার সিআরপিতে এসে থেরাপি দেওয়া লাগে। তবে আজকে বৃষ্টির জন্য অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। পুরো সড়ককেই হাঁটু সমান পানি আর তাই ৪০ টাকার রিকশা ভাড়া ১০০ টাকা দিয়ে আসতে হলো। তাও সব রিকশা যেতে চায় না।
সাভারের অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ব্যাংক কলোনি এলাকার প্রায় প্রতিটি রাস্তাতেই জলাবদ্ধতার দৃশ্য দেখা যায়। ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ বৃষ্টিতে তাদের এক প্রকার ঘরবন্দি অবস্থায় থাকতে হয়। এলাকাটি ঘুরে দেখা যায় মাদ্রাসা মসজিদ সংলগ্ন সড়ক, ছাপড়া মসজিদ সংলগ্ন সড়ক, কাস্টমস অফিস মোড়, নতুন অ্যাসেড স্কুলের সামনের সড়ক ও গার্লস স্কুল রোডসহ প্রায় প্রতিটি সড়কেই রয়েছে জলাবদ্ধতা। এমনকি এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বাড়ির সামনের রাস্তাটিও ডুবে আছে পানির নিচে। ব্যাংক কলোনির এইচ ব্লকের গার্লস স্কুল রোডের একটি ড্রেন ময়লা পানিতে পূর্ণ তার পাশেই অবস্থিত একটি বাসার উঠানে জমে আছে নোংড়া পানি। গতকালের বৃষ্টির পর সড়কের ড্রেনের পানি ঢুকে পরেছে বাড়িটিতে। বাসার ভাড়াটিয়াদের প্রায়ই এ দূর্ভোগে পরতে হয়। বাড়িটির ভাড়াটিয়া মো. রফিক জানান, বাসা থেকে ময়লা পানি ড্রেন দিয়ে বের হওয়ার কথা। উল্টা ড্রেনের ময়লা পানি বাসায় ঢুকতেছে। এভাবে তো বসবাস করা সম্ভব না তাই ভাবতেছি বাসা ছেড়ে দিবো।
সামান্য বৃষ্টিতেই খানাখন্দে ভরা সাভার পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের উলাইল থেকে সাধাপুরের সড়কটির বিভিন্ন অংশে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে যায়। ওই পথে চলাচলকীদের প্রতিদিনই তাই চরম ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। ওই পথে চলাচলকারী স্থানীয় মো. পরশ হোসেন বলে, উলাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে মাঝির মোড় পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে শুকনো অবস্থাতেই যাওয়া মুশকিল আর একটু বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই হাঁটু পানি পার হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। রিকশা করে গেলেও অনেক সময় রিকশার অর্ধেক পানিতে তলিয়ে যায়।
সাভার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের গেন্ডা টিয়াবাড়ি মহল্লার প্রায় অধিকাংশ বাড়ির ভেতরেই প্রবেশ করেছে ড্রেনের ময়লা পানি। এই এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, আমাদের এলাকার জন্য বৃষ্টি একটা অভিশাপ অল্প বৃষ্টি হলেই ঘরের ভিতর ময়লা পানি ঢুকে যায়। আগে এদিকে একটা খাল ছিলো বৃষ্টি হলে পানি ওইখানে গিয়ে পরতো। আর এখন খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে সাভারের সচেতন মহল বলছে, সাভার পৌরসভার অদূরে বংশী ও ধলেশ্বরী নদীসহ একাধিক খাল থাকলেও শুধুমাত্র পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এ সমস্যায় পরতে হচ্ছে পৌরসভার বাসিন্দাদের।
সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন খান নঈম বলেন, সাভারে অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন হচ্ছ। ড্রেনেজ ব্যাবস্থাসহ নগরায়নের ক্ষেত্রে কোন মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) নেই। ড্রেনগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না। এর ফলে পৌর এলাকার ড্রেনগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি যেসব জায়গায় ড্রেনগুলো সচল ছিল, ওই জায়গায় পানি জমাট বাঁধার কারণে ড্রেন ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়া পৌর এলাকার নদীনালা, খাল-বিল দখলের পর ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকার পানি বের হতে পারছে না। দ্রুত পরিকল্পিত নগরায়নের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে পরিকল্পনা নেওয়া হলে ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে সাভারবাসীকে।সাভার পৌরসভার মেয়র মো. আবদুল গণি বলেন, সাভারে ড্রেনেজ ব্যবস্থা অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেক ভালো। আমরা ড্রেন পরিষ্কার রাখতে নিয়মিতই কাজ করে যাচ্ছি। এই দুদিন অতিবৃষ্টির কারণে একটু জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই এসব পানি নেমে যাবে।
Leave a Reply