সংবাদ রিপোর্ট: রাত ৯টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত গ্যাস পাচ্ছেন সাভারের ভাগলপুরের বাসিন্দারা। ৭টার পর থেকে নিভু নিভু করে একসময় নিভে যায় চুলা। মাঝে মাঝে দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দেখা মিলে গ্যাসের। তবে সেটি খুব সময়েই হয়। বাসা বাড়িতে গ্যাসের এ তীব্র সংকট বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছে। এর বাইরে পর্যাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় শিল্পকারখাসহ বিভিন্ন সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে চলছে তীব্র গ্যাস সংকট।ভূক্তভোগীদের দাবি, গ্যাসের সরবরাহ না থাকা, আবার কখনো সরবরাহ থাকলেও গ্যাসের লাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকা ও লোডশেডিংয়ের কারণে এসকল সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে এ সমস্যা থাকলেও গত ২০-২৫ দিন ধরে তা চরম আকার ধারণ করেছে। এতে করে সাভার ও ধামরাইয়ে গ্যাসের তীব্র সংকটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সকলকে। তিতাস কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশে যে পরিমাণ গ্যাস উৎপাদন হয়, তা দিয়ে চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। চাহিদা পূরণে শতকরা ৪০ ভাগ গ্যাস আমদানি করতে হয়। এছাড়া গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ গুণেরও বেশি। ইতোমধ্যে ডলার সংকট ও রিজার্ভের বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার গ্যাসের আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। গ্যাসের এই সংকটের কারণে বিদ্যুতের ওপর বিরুপ প্রভাব পরেছে। সংকট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সরকার অফিস আদালতের সময় পরিবর্তনসহ বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চলতি মাসের পরেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করছেন তারা। সাভারের ভাগলপুরের বাসিন্দা শিক্ষক আল আমিন জানান, রাত ৯টার পর গ্যাসের দেখা পাওয়া যায়। এরপর আবার সকাল ৭টার দিকে চলে যায়। দিনের বেলায় গ্যাস না থাকায় রান্নাবান্নাসহ নানা বিষয়ে ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। তবে বন্ধের দিনগুলিতে গ্যাসের অবস্থা সামান্য ভাল থাকে। একই এলাকায় তিতাসের মাধ্যমে মূল লাইন থেকে ৩ ইঞ্চি পাইপ দিয়ে উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে বেঙ্গল ফাইন সিরামিকস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি গ্যাস সংযোগ নিয়েছিল। বিভিন্ন ধরনের ১৫ থেকে ১৬ হাজার পিস সিরামিক পণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। তবে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন কমার পাশাপাশি প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার পিস পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানে গ্যাস দেওয়ার জন্য মুক্তির মোড় থেকে ৩ ইঞ্চি পাইপ দিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সংযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু পরে এই লাইন থেকে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছিলাম না। এর ওপর বর্তমানের গ্যাসের তীব্র সংকটের কারণে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছি। প্রতিদিনই প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে আমাদের।’ এদিকে, রাত ১০ টার পর থেকেই সাভার ও ধামরাইয়ের সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোর সামনে জড়ো হতে থাকে বিভিন্ন ধরনের সিএনজিচালিত পরিবহন। সরকারি বিধি নিষেধ থাকায় সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে রাত ১১টার আগে ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস নেওয়ার সুযোগ না থাকলেও লাইনে সবার আগে জায়গা করে নিতে ঘণ্টাখানেক আগেই অনেকে উপস্থিত হন সেখানে। লাইনে দাঁড়িয়ে গ্যাস পেতে সময় লেগে যায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টারও বেশি। দিনের বেলায়ও গ্যাস পেতে পরিবহগুলোকে লাইনে ১ থেকে ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সাভার ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো দেখা যায়, রাতে স্টেশনগুলোর সামনে দীর্ঘ লাইনে গ্যাস নিতে অপেক্ষা করছেন গ্যাস চালিত পরিবহনগুলো। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর তারা গ্যাস নিয়ে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন। দিনের বেলায় গ্যাসের লাইনে গ্যাসের চাপ (প্রেসার) কম থাকায় এবং সারাদিনের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে রাত ১১টার পর থেকে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে ভিড় করেন গ্যাস প্রত্যাশীরা। তবে বিভিন্ন পরিবহনগুলো তাদের প্রয়োজন অনুসারে দিনের বিভিন্ন সময়ে (সন্ধ্যা ৬ টার আগ পর্যন্ত) ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস নিতে যান। ৮ অক্টোবর শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ধামরাইয়ের এনএন্ডএন সিএনজি ফিলিং স্টেশনে প্রাইভেটকারে গ্যাস নেন মো. মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগে যেখানে প্রতিবার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার গ্যাস ভরে নেয়া যেত এখন গ্যাসের লাইনে চাপ (গ্যাসের প্রেসার) কম থাকায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকার গ্যাস নিতে পারতেছি। এভাবে কি বারবার দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে গ্যাস নেয়া সম্ভব? রাতের বেলা গ্যাস নিতে ২ থেকে ৩ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়।’ একাধিক পরিবহনের চালকরা জানান, রাতের বেলায় গ্যাস নিতে লাইনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পর কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ গ্যাস পাওয়া সম্ভব হলেও দিনের বেলায় পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছেন না তারা। ৯ অক্টোবর রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ধামরাইয়ের এনঅ্যান্ডএন সিএনজি ফিলিং স্টেশনে চুপচাপ বসেছিলেন ট্রাক চালক ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘সকাল ১১ টা থিকা বসে আছি। লাইনে গ্যাস নাই। কখন আসবো তাও তো কেউ জানে না। গ্যাস না নিয়া যাওয়ার তো কোন উপায় নাই তাই বইসা আছি।’ এদিকে, সাভার ও ধামরাইয়ে দিনে ও রাতের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া হচ্ছে বৈদ্যুতিক লোডশেডিং। এতে গ্যাস প্রত্যাশীদের পাশাপাশি সিএনজি ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষকেও ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। ধামরাইয়ের এনঅ্যান্ডএন সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবু সাইদ বলেন, ‘এমনিতেই পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছি না আমরা। গ্যাসের মূল লাইনে গ্যাসের চাপ স্বাভাবিকভাবে ১৮ থেকে ২০ পিএসআইজি পাই। কিন্তু এখন আমরা সেখানে ৫ থেকে ৭ পিএসআইজি পাচ্ছি। তবে রাতের বেলায় ১২ থেকে ১৩ পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রতিদিনই বেশ কয়েকবার লোড শেডিং হয়। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লোড শেডিংয়ের এই দীর্ঘ সময়টায় জেনারেটর চালিয়ে গ্যাস দেয়া সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে খুব বাজে সময় যাচ্ছে।’ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাভারের আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক আবু সাদাৎ মো. সায়েম জানান, গ্যাস সংকট এখন একটি জাতীয় সমস্যা। সাভার, ধামরাই ও মানিকগঞ্জ এলাকাটি গ্যাস উৎপাদনের স্থান সিলেট থেকে অনেক দূরে ও আমদানির পর সরবরাহের মূল
Leave a Reply