সংবাদ রিপোর্ট : সাভার পৌরসভা কর্তৃক ১৯ জুন কুরবানির পশুর হাট ইজারা সম্পন্ন হলেও পরিচালনা নিয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা। পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত ভাগলপুর মহল্লার বাসিন্দা রুপোকুর রহমান নামে এক ব্যক্তি ইজারা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে সর্বো”চ দরদাতা হলেও পরক্ষণেই তিনি ‘কিছু কারণ উল্লেখ করে’ হাট পরিচালনা করতে অপারগতা প্রকাশ করে পৌরসভার মেয়র বরাবর আবেদন করেন। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ না করে রুপোকুর রহমানের সঙ্গে ইজারা চুক্তি সম্পাদন করে। এর মধ্যে আরেকটি পক্ষ হাট পরিচালনার প্রচারনা চালালে হাটের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে। হাট কারা পরিচালনা করবে তা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। জটিলতা নিরসনে ‘পর্দার আড়ালে’ নানামুখী উদ্যোগ শুরু হয়। গেন্ডা মহল্লা এবং রেডিও কলোনী স্কুল মাঠে হাট হবে এমন পৃথক প্রচারনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়, পৌরসভার পশুর হাট আসলে কোথায় বসবে এবং কারা পরিচালনা করবে এনিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায়২২ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ইজারাদারের কাছ থেকে হাট পরিচালনার ‘দায়িত্ব নিয়েছেন’ শামীম হাসান নামে এক যুবক। তিনি রেডিও কলোনী মডেল স্কুল মাঠে হাট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এ খবরে স্বস্তি মিলে ‘উৎকন্ঠায় থাকা’ সাধারণ মানুষের। এদিকে সাভারের বাসিন্দারা পৌরসভার নির্ধারিত পশুর হাট ছাড়াও পাশে ধামরাইয়ের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কুরবানির পশু কিনে থাকেন। অনেকে যান পাড়াগাঁও, জয়মন্টব, কালামপুর, আশুলিয়ার হাটে। ধনাঢ্যরা যান মোহাম্মদপুর সাদেক এগ্রো, জাকের এগ্রোতে। গাবতলী হাটেও যান অনেকে। এছাড়া খামার থেকে সংগ্রহ করেন এক শ্রেণির মানুষ। সব মিলিয়ে এখানকার মানুষের কুরবানির পশু নিয়ে ভাবনা নেই অনেক আগে থেকেই।
সাভার পৌরসভার কুরবানির পশুর হাট ইজারা নিতে দরপত্র কিনে থাাকেন এমন একাধিক ব্যক্তি জানান, পৌর কর্তৃপক্ষ এবারো স্থান হিসেবে গতবারের হাটের স্থান গেন্ডা আশরাফ উদ্দিন খান ইমুর বালু মাঠ এবং রেডিও কলোনী মডেল স্কুল মাঠ নিয়ে আলোচনা করে। পৌর কর্তৃপক্ষ বালুর মাঠকে প্রধান্য দিলে মঙ্গলবার রাতে গেন্ডা বালুর মাঠে হাটের প্র¯‘তি শুরু করে ইজারাদারের লোকজন। তবে বুধবার দুপুরের পর তা ভন্ডুল হয়ে যায়। সাভার পৌরসভা কর্তৃক কুরবানির পশুর হাট ইজারা দেয়া হলেও নেই কোন নির্দিষ্ট বা নির্ধারিত স্থান। ইজারাদারের নিজস্ব ব্যব¯’াপনায় হাট আয়োজন করতে হয় প্রতিবছর। ঢাকা জেলা প্রশাসক উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে হাটের জমির অনুমোদন দিয়ে থাকেন। ফলে পৌরসভা থেকে কোটি টাকা দিয়ে হাট ইজারা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় ইজারাদারকে। ব্যক্তি মালিকানার জমি ভাড়া নিতে বা স্কুল মাঠ বরাদ্দ পেতে ইজারাদারের গলদঘর্ম দশা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, যদি উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন স্থান বরাদ্দ দিয়ে থাকে পৌরসভা কেন হাট ইজারা দিয়ে থাকে? ইজারাদার এতো টাকা দিয়ে পৌরসভা থেকে স্রেফ একটি লিখিত কাগজ (অনুমোদনপত্র) ছাড়া আর কী পেয়ে থাকেন। এমনকি হাট শেষে ঈদের পর ওই স্থান পরিস্কারও করতে হয় ইজারাদারের খরচায়। পৌর কর্তৃপক্ষ আগে ইজারা ট্রেড লাইসেন্স নিশ্চিতের শর্ত দিয়েছিল, এবার যুক্ত হয়েছে আয়কর সনদ। এতো টাকা দিয়ে এবং কঠিন সব শর্ত পূরণ করে ‘ইজারা’ নিয়ে ইজারাদার আসলে কী পান তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আবার আবাসিক এলাকা ও স্কুল মাঠে হাট বসানো নিয়েও আছে অনেকের আপত্তি। এমন পরি¯ি’তিতে পৌর কর্তৃপক্ষকে সরাসরি পাশে পায় না ইজারাদার। কোনোরকম নিশ্চয়তা না থাকায় আগামিতে এতো টাকার এই হাটের ভবিষ্যত কী হবে তা নিয়েও চলছে নানামুখী আলোচনা।
অন্যদিকে সাভারের সাড়ে ৩ হাজার খামারে কুরবানির জন্য প্র¯‘ত আছে ৪১ হাজার গবাদি পশু। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেঁড়াসহ নানা ধরনের কুরবানির পশু পালন করা হয়েছে খামারে। ১২’শ কেজি ওজনের গরু রাজাবাবু, সাড়ে ১২’শ কেজি ওজনের মহিষ ‘পাঠান’ ও ‘সুলতান’ সবার নজর কেড়েছে। অনেকেই খামার থেকে সংগ্রহ করছেন কুরবানির পশু। খামারে পালন করা হ”েছ ব্রাহামা,শাহীওয়াল, ভুট্টি, হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান, রাউন সুইস, সিন্ধিসহ নানা জাতের গরু। জাফরাবাদী, মুররা, গোদাবরী, মেহসানাসহ বিভিন্ন জাতের মহিষ পালন করেন এখানকার খামারিরা। পৌর এলাকার একটি খামারে রয়েছে ছাগল, ভেড়া, দুম্বাসহ বিভিন্ন জাতের পশু। কুরবানির ঈদ সামনে রেখে এখানকার খামার মালিক ও সংশ্লিষ্টরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। পশু পরিচর্যায় খামার কর্মীদের ব্যস্ততার কমতি নেই। এক লাখ টাকা মূল্যমানের পশু থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকা মূল্যমানের পশু রয়েছে এসব খামারে। বাইশ মাইল এলাকার লোটাস এগ্রো খামারের ১২’শ কেজি ওজনের গরু রাজাবাবু ধনাঢ্য ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ১০ লাখ টাকার বেশি দাম উঠেছে রাজাবাবুর। শ্রীপুর এলাকার কাইয়ুম এগ্রো খামারের সাড়ে ১২’শ কেজি ওজনের মহিষ ‘পাঠান’ ও ‘সুলতান’ ক্রেতাদের নজর কেড়েছে। পাঠানের দাম উঠেছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। কাইয়ুম এগ্রো খামারের মালিক আবদুল কাইয়ুম জানান, অনলাইনে ও সরাসরি খামারে এসে পছন্দ করে অনেকেই তার খামার থেকে সংগ্রহ করছেন কুরবানির পশু। আবার কেউ কেউ টাকা বায়না দিয়েছেন বা অগ্রিম পরিশোধ করেছেন। তারা কুরবানির দিন সকালে অথবা একদিন পূর্বে নিয়ে যাবেন।
আশুলিয়া নয়াপাড়া এলাকায় সাহারা এগ্রো ফার্মে তোলা হয়েছে দেশি-বিদেশি জাতের পাকিস্তানি শাহীওয়াল, হলস্টেইন ফিজিয়ানসহ ১২টি গরু। দুই লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকার অধিক দামের গরু পাওয়া যাবে এই ফার্মে। এ বছর সাহারা এগ্রো ফার্মে খামারি আব্দুল আজিজের নতুন সংযোজন করেছে মহিষের খামার। মহিষের খামারে তৈরি করেছেন মহিষের গোসলের জন্য পুকুর। সাভার পৌরসভার নির্ধারিত হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যেমন পশু আসে তেমনি আসে বিভিন্ন গ্রাম থেকেও। এছাড়া পাশে ধামরাইয়ের ফোর্ডনগর এলাকায় রয়েছে আরেকটি পশুর হাট। সব মিলিয়ে সাভারের ক্রেতাদের পশু নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই বললেই চলে।
সাভার উপজেলা প্রাণি সম্পদ উন্নয়ন কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম জানান, কুরবানির জন্য সাভারে সাড়ে ৩ হাজার খামারে প্রায় ৪১ হাজার গবাদিপশু পালন করা হ”েছ। খামারীদের মাঝে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন¯’ানের খামারিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। খামারিদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে সার্বক্ষণিক নজর রয়েছে।
সাভার ডেইরি ফার্মাস এসোসিয়েশনের সভাপতি মাকসুদুর রহমান খান জানান, কুরবানীর উপলক্ষে সাভারের গবাদি পশুর সুনাম দীর্ঘদিনের। এখানকার খামারিরা প্রাকৃতিক ও উন্নত মানের ঘাস, খড়, কুড়া, ভূষিসহ দানাদার খাবার ছাড়া অন্য কোন উপায় অবলম্বন করে না।
Leave a Reply