সংবাদ ডেস্ক: দেশের আট জেলায় ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে খুলনায় একজন, মানিকগঞ্জে একজন, কিশোরগঞ্জে দুজন, চুয়াডাঙ্গায় একজন, ফরিদপুরে দুজন, সাতক্ষীরায় একজন, পিরোজপুরে একজন ময়মনসিংহে একজন মারা গেছেন। ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে এসব পৃথক ঘটনা ঘটে। জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে এসব জানা যায়।
মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় বজ্রপাতে আনোয়ারা বেগম (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের চর বাইলজুরি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আনোয়ারা ওই গ্রামের কৃষক ইছাক মিয়ার স্ত্রী। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুর রহমান বলেন, বাড়ির পাশে একটি খোলা মাঠে গরুর জন্য ঘাস কাটতে যান আনোয়ারা বেগম। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই আনোয়ারা মারা যান। পরে বাড়ির লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির পরে তাকে মাঠ থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়।
খুলনা
দুপুরে খুলনার কয়রা উপজেলায় বজ্রপাতে শহিদুল গাজী (৫৯) নামে এক মৎস্য চাষির মৃত্যু হয়েছে। মৃত শহিদুল উপজেলার আমাদি ইউনিয়নের নাকশা গ্রামের মৃত্যু মজিবর রহমান গাজীর ছেলে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আইবুর রহমান সানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিজের মাছের ঘেরে কাজ করার সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের ইটনা ও হোসেনপুর উপজেলায় বজ্রপাতে এক দুজনের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে পৃথক দুটি ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেন- হোসেনপুর উপজেলা জিনারী ইউনিয়নের চর হাজীপুর গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী নূর নাহার (৪৫) ও ইটনা উপজেলার বাদলা ইউনিয়নের বর্শিকুড়া গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে বাবুল মিয়া (৩৫)। স্থানীয়রা জানান, সকালে নূর নাহার বাড়ির পাশের জমি থেকে ছাগল আনতে যান। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। অপর দিকে দুপুরে ইটনার বাদলা ইউনিয়নের মান্দার হাওরে নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান বাবুল মিয়া। ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম মোল্লা ও হোসেনপুর উপজেলার জিনারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন
চুয়াডাঙ্গা
বিকেল ৫টার দিকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হাতিভাঙ্গা গ্রামে বজ্রপাতে সাজু আহমেদ (২২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের বসুতিপাড়ার কাশেম আলীর ছেলে। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, বিকেলে সাজু আহমেদ ভৈরব নদী থেকে পাটখড়ি তুলছিলেন। এ সময় বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত শুরু হয়। বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তার মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হবে।
ফরিদপুর
ফরিদপুর সদর ও মধুখালী উপজেলায় বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ২টা ও ৪টার দিকে পৃথক দুটি ঘটনা ঘটে। মৃত দুজন হলেন, মধুখালী উপজেলার খোদা বাসপুর গ্রামের তোরাব মোল্যার ছেলে শফিকুল ইসলাম মোল্যা (২৮) ও সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চর ধোলাই গ্রামের গেন্দু শেখের ছেলে খলিল শেখ (৪০)। মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, শফিকুল নানাবাড়িতে থাকতেন। দুপুরে বৃষ্টির সময় কৃষিকাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। হঠাৎ বজ্রপাতে শফিকুল গুরুতর আহত হন। মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এদিকে নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান বলেন, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে কৃষক খলিল বাড়ির পাশের একটি জমিতে ছন কাটছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
সাতক্ষীরা
দুপুরে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার ভাতশালা স্কুলমাঠে খেলার সময় বজ্রপাতে শুভজিৎ সরকার নামের এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। মৃত শুভজিৎ সরকার ভাতশালা এলাকার রাজকুমার সরকারের ছেলে। সে ভাতশালা সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। বজ্রপাতে আবিদ হাসান ও জয় কুমার দাস নামের তার দুই সহপাঠী আহত হয়। ভাতশালা সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, টিফিনের সময় স্কুলমাঠে ছাত্ররা খেলা করছিল। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে বেশিরভাগ ছাত্র স্কুলের বারান্দায় উঠে যায়। কিন্তু মাঠে দু-তিনজন ছাত্র তখনো ছিল। হঠাৎ বজ্রপাত হলে শুভাজিৎ সরকারসহ তিনজন আহত হয়। তাদের সখিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শুভজিৎকে মৃত ঘোষণা করেন। দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ ওবায়দুল্লাহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পিরোজপুর
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায় টিউবওয়েল থেকে পানি আনতে গিয়ে বজ্রপাতে মো. মোফাজ্জেল হাওলাদার (৭৪) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার গরীপুর ইউনিয়নের মধ্য চড়াইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বৃদ্ধ মোফাজ্জেল ওই গ্রামের মৃত বন্দে আলী হাওলাদারের ছেলে। স্থানীয় ইউপি সদস্য নাজমুল হাসান বাশার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মোফাজ্জেল প্লাস্টিকের দুটি ড্রাম নিয়ে প্রতিবেশীর টিউবওয়েল থেকে পানি আনতে গেলে বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় পার্শ্ববর্তী সোয়েব ব্যাপারীর গোয়াল ঘরে আশ্রয় নেন। হঠাৎ বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ময়মনসিংহ
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বরিল্যা গ্রামে বজ্রপাতে জাকির হোসেন (২৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি একই গ্রামের মৃত আব্দুল গণির ছেলে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ বলেন, জাকির আমার ভাতিজা। সকালের খাবার খেয়ে বাড়ির পাশের ধানক্ষেতে কাজ করতে যায় সে। এসময় হঠাৎ বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, কোনো অভিযোগ না থাকায় ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
Leave a Reply