সংবাদ রিপোর্ট: সাভারে অনুমোদনবিহীন বিষাক্ত কেমিক্যালের মিশ্রনে তৈরি ভেজাল সয়াবিন তৈল, সরিষা তৈল, ডিটারজেন পাউডার, শিশু খাদ্য তৈরীরসহ দুটি প্রতিষ্ঠানে অভিযার চালিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযানে কারখানা দুটি সিলগালা ও মেশিনারীজসহ তৈরী মালামাল ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৭ মার্চ সোমবার দুপুরে সাভার পৌর এলাকার আড়াপাড়া মেশিনপাড় মহল্লায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি টিনসেড বাড়ির দুটি কক্ষের একটিতে তৈল ও অপরটিতে ডিটারজেন পাউডার তৈরী হতো। একটি ড্রামের ভিতরে ডালডা, পামওয়েলের সাথে বিষাক্ত কেমিক্যালের মিশ্রনে তৈরি ভেজাল সয়াবিন তেল লগো লাগিয়ে বোতলজাত করে বাজারে বিক্রি করছে। নেক্সাস ফুড এন্ড কনজুমার কোম্পানির নামে তৈরী হতো নেক্সাস সরিষার তৈল, গৃহিনী ফার্টিফাইড সয়াবিন তৈল, এক্সেল উইন ওয়াস, নেক্সাস এক্সট্রা পাওয়ার, হ্যানকো পাউডার, নেক্সাস লিকুইড ডিস ওয়াস এবং বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরী হতো। প্রতিটি ভেজার পণ্যের গায়ে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর লগো লাগানো থাকলেও বাস্তবে ছিল না কোন অনুমোদন। কারখানাটির মালিক লিয়াকত হোসেন বলেন, বাজার থেকে ড্রামে তৈল কিনে এনে বোতলে ভরে বাজারজাত করি। কোন কেমিক্যাল মিশাই না। ব্যবসা করে খাই, এখানে দোষের কি? বিএসটিআই এর লগো কেন ব্যবহার করেছেন জানতে চাইলে বলেন, এই লগো দিলে তৈল বেশি বিক্রি হয়। তবে তার প্রতিষ্ঠানের কোন অনুমোদন নেই স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কোন প্রডাক্টটে কি পরিমাণ ক্যামিকেল দিতে হবে তা তিনি নিজেই মেশান। নিজেকে তিনি ক্যামিস্ট দাবী করেন। আগের অন্যের কারখানায় কাজ করতেন সেখান থেকে কোন পণ্যে কি পরিমাণ কেমিক্যাল মিশ্রন করতে হবে তা শিখেছেন। তাই নিজেকে ক্যামিস্ট দাবী করেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাভার সদর সার্কেল জহিরুল আলম বলেন, কারখানাটিতে যা তৈরী হতো সবই ভেজাল। কেমিকেল দিয়ে সয়াবিন তৈল তৈরী হতো যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিভিন্ন শিশু খাদ্যসহ ওয়াশিং পাউডার তৈরী হতো যা হাতের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। কারখানার উৎপাদিত সমস্ত মালামাল পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। মেশিন জব্দ করে কারখানাটি সিলগালা করা হয়েছে। অপরদিকে পাশের আরেকটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশু খাদ্য ‘সন্দেশ’ তৈরী কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। তখন কারখানায় কাউকে পাওয়া না গেলেও কারখানার সমস্ত মালামাল ধ্বংস করে দেওয়া হয়। কারখানাটিতে সুমন ফুড প্রোডাক্টস এর সুমনের মিল্ক এন্ড টফি সন্দেস তৈরী হতো। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পঁচা মিষ্টির সিরার সাথে কেমিক্যালের মিশ্রনে তৈরী করা হতো এসব শিশু খাদ্য। তবে কারখানাটির যৌথ মালিক মমিন, আপন ও হায়াত পালিয়ে যাওয়ায় কারও যাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) জহিরুল আলম বলেন, নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেমিক্যালের মিশ্রনে তৈরী করা হতো এসব শিশু খাদ্য। কারখানায় কাউকে না পাওয়ায় সমস্ত মালামাল ধ্বংস করে কারখানাটি সিলগালা করা হয়েছে। পাশেই বাড্ডা ভাটপাড়া মহল্লায় ইলিয়াস আহমেদের মালিকানাধীন ‘আল মদিনা সিটি’ লগো লাগিয়ে কেমিকেলের মিশ্রনে আরেকটি ভেজাল তৈল তৈরীর কারখানা থাকলেও সেটিতে অভিযান পরিচালনা করেননি। যদিও প্রথমে বলেছিলেন অভিযান করবেন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজকে সময় নাই, তাই অভিযান চালাতে পারবো না। পরে দেখবো বিষয়টি।
Leave a Reply