সংবাদ ডেস্ক: ঋতুর পালাবদলে প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্মকাল। চারিদিকে প্রখর রোদ-গরমের দাবদাহ। এরই মাঝে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশান্তির পরশ ছড়াচ্ছে ভিনদেশি এক রঙিন ফুল। বসন্তের শেষ দিকে এখানকার প্রকৃতি সেজেছে ক্যাসিয়া রেনিজেরার অপরূপ সাজে। ক্যাসিয়া রেনিজেরা আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত। এটি আমাদের দেশীয় ফুল নয়, এটি একটি জাপানের জাতীয় ফুল। তবে জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবনের ভেতরে, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে ও জহির রায়হান অডিটোরিয়ামের সামনে কয়েকটি ক্যাসিয়া রেনিজারার গাছ দেখা যায়। বসন্তের শেষভাগে গাছগুলোত দেখা মেলে মঞ্জুরির। এ বৃক্ষের ফুল থেকে যে বীজ হয়। তা অনেকটা শিম আকৃতির প্রায় কালো রঙের লম্বা দণ্ডের ফল। ক্যাসিয়া রেনিজেরার সৌন্দর্য সবচেয়ে কাছ থেকে উপভোগ করা যেত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের পাশের গাছটা থেকে। তবে গেল বছরের ২৫ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভেঙে যায় ক্যাসিয়া রেনিজারা গাছটি। ক্যাসিয়া রেনিজেরার বৈজ্ঞানিক নাম বার্মিজ পিংক ক্যাসিয়া (Burmese Pink Cassia)। গাছের উচ্চতা হয়ে থাকে সাধারণত আট থেকে দশ মিটার। চিকন ডালগুলো নিচের দিকে ঝুলে থাকে। রোপণের চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেই গাছে ফুল আসে। বর্ষা ছাড়া বছরের মোটামুটি বেশির ভাগ সময়ই গাছ থাকে পাতাহীন। বসন্তে নতুন পাতা গজানোর পর ফুল ধরতে শুরু করে। প্রথমদিকের গোলাপী ফুল ক্রমেই সাদা আকার ধারণ করে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকে শুরু করে এপ্রিল-মে পর্যন্ত ফুলের দেখা মেলে। দৃষ্টিনন্দন ক্যাসিয়ার ৪০ প্রকার গুল্ম ও বৃক্ষ জাত রয়েছে। এর মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশে মিলিয়ে ১৫টি প্রজাতির দেখা পাওয়া যায়। ২০০২ সালে অধ্যাপক এ আর খান ক্যাসিয়ার বীজ থেকে চারা তৈরি করে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি স্থানে রোপণ করেন। এর কয়েক বছর পর সেসব গাছে ফুল ফোটে। বিগত এক দশক ধরে ক্যাম্পাসে বছরের এই সময়টিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে গোলাপি রাঙা এ ফুল। রাজধানীর গুলশানে এ ফুল দেখে এ আর খান বিশ্ববিদ্যালয়ে চারা রোপণ করেছিলেন বলে জানা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী জুনায়েদ আহমেদ বলেন, বসন্তের শেষের দিকে ক্যাম্পাসে এই বাহারি রঙের ফুলের উৎসব শুরু হয়ে যায়। সঙ্গে সবুজের নতুন পাতা এক অপরূপ আবহ সৃষ্টি করে। এই ফুল ফোটার সময় গাছের সব পাতা ঝরে যায়। তখন এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ আহাম্মদ খান বলেন, ক্যাসিয়া রেনিজেরা আমাদের দেশি কোনো ফুলগাছ নয়। এটি মূলত বিদেশি ফুল। বাংলাদেশে সব জায়গায়ই এই ফুলগাছ দেখা যায় না। এ ফুল যখন ফোটে তখন গাছের সব পাতা ঝরে যায় এবং এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়।
Leave a Reply