স্পোর্টস ডেস্ক: নেইমার নেই। কে জেতাবেন ব্রাজিলকে। সমালোচকদের এমন প্রশ্নে ব্রাজিলিয়ানদের জবাব- দলের প্রত্যেক সদস্যই তো এক একজন নেইমার। কোচ তিতে দলটাকে এমনভাবে তৈরি করেছেন যেন, তারা নির্দিষ্ট একজন ফুটবরার নির্ভর না হয়ে পড়ে। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে সেটাই দেখা গেছে। নেইমারের অভাব খুব একটা বোধ হয়নি। দুই উইংয়ে রাফিনহা আর ভিনিসিয়ুস জুনিয়র যেভাবে একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছেন, মাঝ মাঠে যেভাবে ক্যাসেমিরো, পাকুয়েতারা খেলার ভিত তৈরি করেছেন আর রিচার্লিসন যেভাবে একের পর এক বিপজ্জনক পজিশনে চলে গিয়েছিলেন, তাতে সুইজারল্যান্ড ছিল তটস্থ। গোল করতে না পারি, গোল হজম করবো না- এ প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাঠে নেমেছিলো তারা। কিন্তু একবার তাদের রক্ষণ ভেঙ্গে ভিনিসিয়ুস গোল করলেও সেটি অফসাইডে বাতিল হয়ে যায়। পরে ক্যাসেমিরোর গোলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে ব্রাজিল। ক্যাসেমিরোকে ব্রাজিল শিবিরে ‘দ্য ট্যাঙ্ক’ বলে ডাকা হয়। সেই ট্যাঙ্কের বিধ্বংসী গোলে শুধু তিন পয়েন্ট এল না, একইসঙ্গে নকআউটও নিশ্চিত হয়ে গেল ব্রাজিলের। ম্যাচ শেষের পরই নেইমারের বার্তা চলে এল। যেখানে নেইমার বলে দিলেন, ‘এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরো। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে নেইমারের কথায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে গেলেন কোচ তিতেও। ব্রাজিল কোচ বলে গেলেন, ‘নেইমার ভুল তো কিছু বলেনি। আমিও বলব এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরোই।’ কিন্তু যাকে নিয়ে এত কথা, সেই ক্যাসেমিরো ম্যাচ শেষে জয়ের কৃতিত্বের ভাগ দিলেন সবাইকে। বাড়তি কোনও উচ্ছ্বাস নেই। নিজের থেকেও তার মুখে বেশি দল। ম্যাচের সেরা হয়েও তিনি নিজে কোনোরকম কৃতিত্ব নিতে নারাজ। ম্যাচ শেষে বলছিলেন, ‘আমি ম্যাচের সেরা হয়েছি ঠিকই; কিন্তু এই পুরস্কার দলের সবার পাওয়া উচিত। সবাইকে সেরাটা দিতে পেরেছে বলেই আমরা জিততে পেরেছি। কারও একার ভাল খেলার জন্য দল জেতেনি।’ ২০১৪ বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে সেমিফাইনালে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে হার। এবার অবশ্য শুরু থেকেই চ্যাম্পিয়নের মতোই দেখাচ্ছে তিতের দলকে। বলাবলি শুরু হয়ে গেছে, এবার ট্রফির অন্যতম দাবিদার ব্রাজিলই। প্রথম দুটো ম্যাচে টিম যেভাবে খেলেছে, তাতে প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রেস কনফারেন্স এসব নিয়ে প্রশ্নও করা হল ব্রাজিলের ‘ট্যাঙ্ককে’। জিজ্ঞেস করা হয়, গত বিশ্বকাপের দলের সঙ্গে এই দলটার কোথায় পার্থক্য দেখছেন? ক্যাসেমিরো পরিষ্কার বলে গেলেন, ‘এবারের দল অনেক বেশি ব্যালান্সড। দলে অনেক বেশি ম্যাচ উইনার। তিনি আরো বলেন, ‘আপনি যদি দেখেন, তাহলে আমাদের এবারের দলটা অনেক বেশি শক্তিশালী। দলে অনেক বিকল্প রয়েছে। অনেক ম্যাচ উইনার। স্কোয়াডে যারা রয়েছে তাদের বেশিরভাগ সবাই বড় ক্লাবে খেলে। আর নিজেদের ক্লাবে প্রত্যেকেই কিন্তু সেরা।’ ভুলও কিছু বলেননি ক্যাসেমিরো। ভিনিসিয়ুস, রদ্রিগো, রাফিনহা, অ্যান্টোনি, গ্যাব্রিয়েল হেসুস- এরা প্রত্যেকে বিশ্বের নামি-দামি সব ক্লাবে খেলেন। কেউ রিয়াল মাদ্রিদ, কেউ বার্সেলোনা, কেউ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, আর্সেনালে রয়েছেন। কাসেমিরো, তিনিও সম্প্রতি রিয়াল থেকে ইউনাইটেডে গেলেন। ম্যাচ শেষে তাই বলছিলেন, ‘আমাদের দলে সবাই জানে কাকে কী করতে হবে। তাই ম্যাচ বের করতে সমস্যা হচ্ছে না। প্লাস, আমাদের ডিফেন্সও দারুণ। আমাদের গোলকিপার অ্যালিসনকে কিছু করতেই হয়নি এখনও পর্যন্ত। কারণ আমাদের ডিফেন্স শুরু হয় রিচার্লিসনের পা থেকে! শুনতে অবাক লাগবে; কিন্তু আমাদের ফার্স্ট লাইন অব ডিফেন্স কিন্তু রিচার্লিসনই।’
Leave a Reply