সংবাদ ডেস্ক: মানিকগঞ্জ সদর পৌরসভার বেউথা এলাকা থেকে আন্ধার মানিক পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খানাখন্দে ভরা। এই সড়কটি মানিকগঞ্জের প্রধান বাইপাস সড়ক। রাস্তাটির বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দ পেরিয়ে প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ আর ঝুঁকি নিয়ে শতশত ছোট বড় যানবাহন ও হরিরামপুর, ঘিওর, শিবালয়সহ সদর উপজেলার হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে আসছে। রাস্তাটিতে খানাখন্দের কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। পৌর কর্তৃপক্ষ মেরামতের নামে সম্প্রতিকালে ৩৭ লাখ টাকার ব্যয় করে রাস্তাটির কাজ করলেও তা কোনো কাজে আসেনি। রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী দুর্ভোগ পড়া মানুষের অভিযোগ, সঠিকভাবে কাজ না করার কারণে গাড়ির চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে রাস্তাটি আগের চেয়ে আরও বেহাল অবস্থা হয়ে গেছে। সড়কটিতে এই বেহাল দশার কারণে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট ছোট দুর্ঘটনা। এই রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কানিজ ফাতেমা স্কুল, আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল, সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, সরাকারি মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এই পথ দিয়ে স্কুল কলেজে যাওয়া আসা করছেন। সড়কটি সাধারণ মানুষের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ হলেও পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সড়কটি স্থায়ী সংস্কারের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সরেজমিনে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষজন ও যানবাহন চালকদের সাথে কথা বললে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সিএনজি চালক ইমরান হোসেন বলেন, বেওথা থেকে আন্ধারনমানিক প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক দিয়ে প্রতিদিন জেলা শহর থেকে যাত্রী নিয়ে হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করি। রাস্তাটির বিভিন্ন জায়গায় বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে গর্তের মধ্যে গাড়ির চাকা পড়ে উল্টে যায়। অনেক বছর ধরে রাস্তাটির এই বেহাল অবস্থা দেখে আসছি। কিন্ত স্থায়ী ভাবে মেরামতের কোনো বন্দোবস্ত করছেন না পৌরসভার মেয়র।আন্ধারমানিক এলাকার মো. হোসেন আলী বলেন, এই রাস্তার সঠিক ভাবে কাজ হচ্ছে না। প্রায় বছর খানেক আগে রাস্তার খানাখন্দের মধ্যে ইট, বালু ফেলে কিছুটা মেরামত করেছিল। কিন্ত রাস্তাটির স্থায়ীভাবে কাজ না করার কারণে, গাড়ি চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে আবার খানাখন্দে ভরে যায়। তিনি আরও বলেন, এই রাস্তাটিকে বাইপাস হাইওয়ে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মহাসড়কের বড় বড় গাড়িগুলো এই রুটে যাতায়াত করে। সে কারণে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাই। ঝিটকা এলাকার মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তায় দায়সারা কাজ করা হলেও সেগুলো পানিতে পড়েছে। কোনো কাজেই আসেনি এই টাকা। এই রাস্তাটি স্থায়ীভাবে নির্মাণ না করায় চারটি উপজেলার মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। স্কুলের বাস চালক স্বপন মিয়া জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কটি আর সড়ক থাকে না। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। পানির নিচে বড় বড় গর্ত হয়ে উঠে ঝুঁকিপূর্ণ। তখন শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলাচল করতে হয়। কোনো কোনো সময় শিক্ষার্থী নিয়ে বাস উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত মেরামত করা না হলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
কয়েকজন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, স্কুলের বাস বা অন্য যানবাহনে করে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ভাঙা-চোরা সড়ক দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এছাড়া সামান্য একটু বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানিতে ভরপুর থাকে। গর্তে বাসের চাকা পড়লে তাদের মনে হয় এই বুঝি বাসটি উল্টে পড়ে গেল। তাই দ্রুত রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র মো. রমজান আলী রাস্তাটির অবস্থা একেবারেই নাজুক স্বীকার করে বলেন, এই রাস্তাটিতে স্থায়ীভাবে কাজ করা যায় সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে ছোট বাজেটে এতো বড় কাজ সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সম্প্রতিকালে এই রাস্তায় ৩৭ লাখ টাকার কাজ হয়েছিল তা কোনো কাজেই আসেনি। সে জন্য পরিকল্পনা করেই রাস্তাটির কাজ হাতে নেওয়া হবে। কতদিনের মধ্যে এই রাস্তাটির স্থায়ী কাজ করবেন বলে মনে করছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, খুব দ্রুত এই রাস্তাটির কাজ করব।
Leave a Reply