সংবাদ রিপোর্ট : টানা কয়েক দিন ধরেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে। গত কয়েক দিন এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রোদে পুড়ে নষ্ট হচ্ছে ফসলের মাঠ। তাই তীব্র গরম থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টি কামনা করে বিশেষ নামাজ আদায় করেছেন ঢাকার সাভার এবং ধামরাইয়ের স্থানীয় বাসিন্দারা। ৭ জুন বুধবার সকালে ধামরাই উপজেলার শরিফবাগ ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা মাঠে এবং সাভার উপজেলার গেরুয়া এলাকার দারুল উলুম মাবিয়া ইসলামিয়া মাদরাসা মাঠে বিশেষ এ নামাজ আদায় করা হয়। ধর্মমতে, এ নামাজকে বলা হয় ‘ইসতিসকার নামাজ’। এ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি বা পানির জন্য প্রার্থনা করা হয়। এই বিশেষ নামাজের আয়োজকরা জানান, টানা তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মাঠে রোদে পুড়ে কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষ রোদে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা বৃষ্টির জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনার আয়োজন করেছেন। এই নামাজে সবাইকে অংশ নেওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচারণাও চালানো হয়েছে। ৭ জুন বুধবার সকালে ধামরাইয়ের শরিফবাগ ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পাঞ্জাবি-টুপি পরে জায়নামাজ নিয়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ মাঠে হাজির হয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই নামাজ আদায় ও দোয়া পরিচালনার জন্য হাজির হন শরিফবাগ ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল ড. মোহাম্মদ ফাইজুল আমীন সরকার। প্রথমে তিনি মুসল্লিদের উদ্দেশে নামাজের নিয়মকানুন বলেন। এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন সবাই। নামাজ শেষে দুই হাত তুলে সবাই বৃষ্টির জন্য মোনাজাত করেন। ছেলেকে নিয়ে নামাজ আদায় করতে এসেছিলেন ধামরাই পৌর শহরের লাকুরিয়া পাড়ার বাসিন্দা রাজিউল হাসান পলাশ। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই মুরুব্বিদের কাছে এই নামাজের বিষয়ে শুনেছেন তিনি। বর্তমান অতিরিক্ত রোদের কারনে তীব্র গরমে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা একধরনের বড় দুর্যোগ। তাই এই দুর্যোগ থেকে মুক্তি পেতে সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এ বিশেষ নামাজ আদায় করতে এসেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রিন্সিপাল ড. মোহাম্মদ ফাইজুল আমীন সরকার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে বৃষ্টি নেই। অনাবৃষ্টির কারণে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, গবাদিপশু কষ্ট পাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতেই ধামরাইয়ের কয়েকটি গ্রামের প্রায় পাঁচশতাধিক বাসিন্দা একত্রিত হয়ে ধর্মীয় নীতি অনুযায়ী দুই রাকাত নামাজ আদায় করে বৃষ্টি ও পানি প্রার্থনা করা হয়েছে। এদিকে সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের গেরুয়া এলাকায় দারুল উলুম মাবিয়া ইসলামিয়া মাদরাসা মাঠে বৃষ্টি কামনা করে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজ আদায় শেষে আল্লাহর কাছে বিশেষ দোয়া করেছেন মুসল্লিরা। ঈদগাহ মাঠে খোলা আকাশের নিচে নামাজ ও মোনাজাত পরিচালনা করেন দারুল উলুম মাবিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার মুহতামিম আলহাজ্ব মুফতি মাহবূবুর রহমান নবাবগঞ্জী। নামাজ শেষে মুফতি মাহবূবুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মানুষ পানির জন্য হাহাকার করছে। আল্লাহ সালাতের মাধ্যমে বৃষ্টি বা পানির জন্য দোয়া চাইতে বলেছেন। তাই আমরা সবাই একত্র হয়ে এ নামাজ আদায় করেছি।’ স্থানীয় বাসিন্দা রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছেই। এ জন্য আমরা মহান আল্লাহর দরবারে প্রশান্তির বৃষ্টি চেয়েছি। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।’
Leave a Reply