সংবাদ রিপোর্টঃ সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে বাড়ছে খুন, অপহরণ ও রহস্যজনক মৃত্যুর সংখ্যা। প্রায় প্রতিনিয়তই এসব উপজেলার কোথাও না কোথাও ঘটছে হত্যা ও অপহরণের মত ঘটনা। এসব অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পরে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও থামছেনা লাশের মিছিল। বেশীরভাগই অজ্ঞাত পুরুষ বা নারীকে লাশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় নির্জন স্থানে। এমনি পরিস্থিতিতে আতংকিত হয়ে পড়েছেন সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের সাধারণ মানুষ। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে ব্যাপক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার কারণে বাড়ছে মানুষ। তাই জনসংখ্যার হারে অপরাধও বাড়ছে। বেশীরভাগ ভ্রাম্যমান অপরাধীরা লাশের ডাম্পিং জোন হিসেবে সাভার, আশুলিয়ার মহাসড়ক ও নির্জন স্থানকে বেছে নেয়। তাই, থানা ৩টিকে গুরুত্ব দিয়ে পুলিশের জনবল ও টহল বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। জানা গেছে, গত ২ জুন সাভারের জয়না বাড়ি এলাকার একটি কলা বাগান থেকে অজ্ঞাত এক নারীর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ধারনা করা হয়, দুর্বৃত্তরা ওই নারীকে ধর্ষণের পরে কুপিয়ে হত্যা করে লাশ ছয়তলা থেকে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। গত ১ মে কেরানীগঞ্জে খুন হওয়া গৃহবধু লামিয়া আক্তারের (১৯) লাশ উদ্ধার করে সাভার মডেল থানা পুলিশ। নিহত ওই গৃহবধুর পরিবার জানায়,গত এক বছর আগে মানিকগঞ্জ এর চরচামটা গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে লামিয়া আক্তারের (১৯) সাথে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নের লংকারচর গ্রামের মৃত মধু মিয়ার ছেলে এমারত হোসেন মিলনের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। যৌতুকের জন্য মারধর করে হত্যা করা হয় লামিয়াকে। পরে তার লাশ গুম করার চেষ্টা করে খুনীরা। একই দিনে ঢাকার ধামরাইয়ে প্রেমিকার বাড়ি থেকে আমিনুর রহমান (২১) নামে এক তরুণের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের কুল্লা গ্রামের কফিল উদ্দিনের বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। গৃহকর্তার মেয়ের সঙ্গে মৃত তরুণের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। ১৯ মে সাভারে ১৩ বছরের এক শিশুর রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয়। সাভারের সিআরপি এলাকায় মুসলিম বয়লার হাউজ নামের এক মুরগির দোকানে এ রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তবে মুরগির দোকানের মালিক বলছেন,ওই শিশু বিদ্যুৎ পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। শিশুটি ওই মুরগির দোকানের কর্মচারী ছিল। ২০ মে সাভারে একটি নির্মাণাধীন পাঁচ তলা ভবনের ছাদ থেকে অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের নগরকোন্ডা এলাকার সেলিনা আক্তার নামের এক নারীর নির্মাণাধীন বাড়ির ছাদ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। অজ্ঞাত ওই নারীকে দুর্বৃত্তরা দুই থেকে তিন দিন আগে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ সেখানে ফেলে যায় বলে ধারণা করছে পুলিশ। ২১ মে সাভার ও আশুলিয়ায় তিন দিনে নৃশংস ভাবে এক কলেজ ছাত্রসহ দুই জন খুন হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই রাতে আশুলিয়া থেকে এক নারীসহ দুই জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গভীর রাতে আশুলিয়ার নিশ্চিতপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাড়ির কক্ষে গার্মেন্টস শ্রমিক রিতুর ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায় পরিবারের সদস্যরা। অপরদিকে পূর্ব নরসিংহপুর এলাকার একটি ভাড়া বাড়ি থেকে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় আজিম নামের এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। এর আগে গেল ১৮ মে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার কলেজ ছাত্র হৃদয়কে অপহরণ করে পঞ্চাশ লাখ টাকা মুক্তিপণ না পেয়ে তাঁকে হত্যা করে অপহরণকারীরা। ২২ মে সাভারে তুরাগ নদী থেকে অজ্ঞাত ত্রিশ বছর বয়সী এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ভাকুর্তা ইউনিয়নের শ্যামলাসী কলাতিয়াপাড়ার তুরাগ নদীর গুদারাঘাট এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৭ মে সাভার ও আশুলিয়া থেকে চার জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ গুলো উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়। পুলিশ জানায়, সাভারের তিনটি এলাকা থেকে এক নারীসহ তিজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষনা করেন। কিভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা তদন্ত করছে পুলিশ। অপরদিকে আশুলিয়ার জামগড়া থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩১ মে সাভারে ব্যাংক কলোনী এলাকার রতন মিয়া নামের এক ব্যক্তির ছয়তলা ভবনের নিচতলায় সিড়ির পাশে বস্তাবন্দি অবস্থায় খুশী আক্তার (৩৫) নামে এক যৌনকর্মীর লাশ উদ্ধার করে সাভার মডেল থানা পুলিশ। ওই নারীকে গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বলে প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন থেকে জা্না গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করে। অপরদিকে আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতাল থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ৩০ মে সাভারের ফুলবাড়িয়া থেকে অপহরণের পরে দুই বছরের শিশু তাবাসসুমকে গত ১ জুন ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশ উদ্ধার করে। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় অপহরণকারী বৃষ্টি ও তার স্বামী চাঁন মিয়াকে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় জাল টাকা তৈরী চক্র, ছিনতাইকারী, ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সাভার মডেল থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, কোন অপরাধ সংগঠিত হলে পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে থাকে। যে কারণে বর্তমানে অপরাধ কমে আসছে। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো: আসাদুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর হত্যা, ছিনতাই, অপহরণের ঘটনা অনুসন্ধান করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তার করতে সমর্থ।কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ছিনতাইকারী ও বিভিন্ন অপরাধীদের উৎপাত বাড়তে পারে। এ ব্যপারে সকলকে সচেতন থাকতে আহবান করেন। সূত্র বলছে, জনবহুল এই এলাকাগুলোতে প্রতিনিয়ত অজ্ঞাত লাশের সন্ধান মিলছে। এত লাশ কার? তা প্রাথমিকভাবে জানতে পারছেনা পুলিশ। অনুসন্ধানে কখনও অজ্ঞাত লাশের পরিচয় মিললেও এখনও অনেকের নাম-পরিচয় উদ্ধার হয়নি। যে কারণে তাদের সমাধি হচ্ছে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে।
Leave a Reply