ধামরাই প্রতিনিধি : পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রথ উৎসব ধামরাইয়ের শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের ঐতিহাসিক প্রায় চারশত বছরের পুরোনো উপমহাদেশ খ্যাত ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী যশোমাধব দেবের রথযাত্রা উৎসবের রথটান লাখো ভক্তের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর আনন্দঘন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপন করা হয়েছে। এ’রথ উৎসব হিন্দু ধর্মীয় ভাবধারায় প্রায় ৪০০ শত বৎসর পূর্ব হতে শুরু হলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কারনে এই উৎসব ব্যাপক ভাবে সার্বজনীনতা লাভ করেছে। ১ জুলাই শুক্রবার রথ উৎসবের উদ্বোধনী অনষ্ঠান যশোমাধব মন্দির পরিচালনা ও রথ কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অবঃ) জীবন কানাই দাস মহোদয়ের সভাপতিত্বে এ’উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মানণীয় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. সামসুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা -২০ ধামরাই আসনের মানণীয় জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব বেনজীর আহমদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার শ্রী বিক্রম কে দোরাইস্বামী, সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম,
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন সরদার বিপিএম (বার) পিপিএম, ধামরাই পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব গোলাম কবির মোল্লা, ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোহাদ্দেছ হোসেন,ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী, ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) মোঃ আতিকুর রহমান পিপিএম, শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দির পরিচালনা ও রথ কমিটির সাধারন সম্পাদক ও কুমুদিনি ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান ও আর পি সাহার পৌত্র রাজিব প্রসাদ সাহা, কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও ধামরাই উপজেলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সাংবাদিক রনজিত কুমার পাল, কর্মকর্তা সমীর সরকার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেছেন কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নন্দ গোপাল সেন। বিকেল ৪টায় মাধব মন্দির থেকে মাধব বিগ্রহসহ অন্যান্য বিগ্রহগুলি নিয়ে এসে সারাবছর যেখানে রথটি থাকে সেই রথ খোলায়, রথের উপর মূর্তিগুলি স্থাপন করা হবে। এর পর বিকেল সাড়ে ৪ টায় রথের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রথখোলায় অস্থায়ী স্থাপিত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানের আলোচনা সভা শেষে প্রধান অতিথি মানণীয় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. সামসুল আলম প্রথমে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে এরপর রথ উৎসব ও মন্দিরের প্রধান পুরোহিত উত্তম গাঙ্গুলীর হাতে প্রতিকী রশি প্রদানের মাধ্যমে রথ টানার আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করেন। এ’সময় ডাক ঢোল কাঁসর ঘন্টা ও মহিলাদের উলু ধ্বনিতে মাধব মন্দিরের বর্তমান প্রধান পুরোহিত উত্তম কুমার গাঙ্গুলী ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করবেন। দুপুরে মাধব মন্দিরে ভোগ রাগের পর প্রসাদ বিতরণ করা হবে আগত হাজারো ভক্ত বৃন্দের মাঝে। বিকেলে রথের সামনে লাখো ভক্তের উপস্থিতিতে উদ্বোধনী আলোচনা সভা শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় দিকে রথটানা শুরু হয়। এই রথটি মূর্তি সমেত লাখো ভক্ত নর-নারী পাটের রশি ধরে কায়েত পাড়ার রথ খোলা থেকে প্রধান সড়ক দিয়ে টেনে পৌর এলাকার গোপনগরে নিয়ে যায়। এখানেই রথটি প্রতিবছরের ন্যায় ৯ দিন অবস্থান করবে। মাধব ও অন্যান্য বিগ্রহগুলি রথ থেকে নামিয়ে নিয়ে ৯ দিন পূজারীদের দ্বারা পুজিত হবে কথিত মাধবের শ্বশুরালয় যাত্রাবাড়ি মন্দিরে। ৯ দিন পর আগামী ৯ই জুলাই অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথযাত্রা উৎসব। পূর্বের ন্যায় মাধব ও অন্যান্য দেব-দেবী বিগ্রহ রথে চড়িয়ে ৯ জুলাই বিকেল ৬ টায় টেনে আনবে পূর্বের স্থান ধামরাই পৌর এলাকার কায়েতপাড়াস্থ রথখোলায়। এখান থেকে মূর্তি গুলি চলে যাবে পুরোনো মাধবের নিজ আলয় মন্দিরে। রথ খোলায় রথটি সারা বছর থাকে বলে এই স্থানটির নামকরণ হয়েছে রথ খোলা। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে ৩৭ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মনোরম নবনির্মিত শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের রথটিই বর্তমান বিশ্বে সর্ববৃহৎ রথ।এটি ভারত সরকারের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে। উক্ত রথ দিয়েই ২০১০ সাল থেকে শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের ঐতিহাসিক রথোৎসব উদযাপন করা হচ্ছে। রাশিয়ান প্রতিনিধি বাংলায় সুন্দর বক্তব্য রাখেন।উল্লেখ্য – এবারের রথ উৎসবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ শতাধিক পুলিশ, র্যাব ,আনসার ব্যাপক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
Leave a Reply