সংবাদ রিপোর্ট: সাভারের নামাগেন্ডা এলাকায় মাদ্রাসার জন্য ওয়াক্ফকৃত পাঁচ শতাংশ জমি এবং স্থাপনা জালজালিয়াতির মাধ্যমে দখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছে উক্ত মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এছাড়া মাদ্রাসাটি বন্ধ করে সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস এবং কবিরাজি চিকিৎসার নামে অনৈতিক কার্যকলাপেরও অভিযোগ রয়েছে ওই প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে। এমতাবস্থায় এলাকার ধর্মপ্রান মুসুল্লিগনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শালিশী বৈঠকের আয়োজন করেন। বৈঠকে অভিযুক্ত প্রিন্সিপাল প্রতিষ্ঠানটি দখলের পক্ষে কোন কাগজ দেখাতে না পেরে এলাকাবাসীর চাপের মুখে স্বেচ্ছায় দখল ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। জানা যায়, সাভার পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের নামাগেন্ডা মহল্লায় গেন্ডা মৌজার এস.এ-৫২৯, আর.এস -৪৫৭ নং খতিয়ানের এস.এ-৪৮১ এবং আর.এস ৫৮৬ নং দাগের ৫ শতাংশ জমি বিগত ২১ অক্টোবর ২০০৯ সালে ৩৯০৯৬ নম্বর রেজিস্ট্রিকৃত ওয়াক্ফ দলিল মূলে আব্দুল বিশ্বাস ও মোঃ চাঁন মিয়া নামে দুই ব্যক্তি জামেয়া আশরাফিয়া মসজিদে কোবা বরাবর ওয়াক্ফ করে দেন।
পরবর্তীতে এলাকাবাসীর উদ্যোগে বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে অনুদান সংগ্রহ করিয়া বিদ্যুৎ সংযোগ ও নলকুপ স্থাপন করিয়া পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট মাদ্রাসা নির্মান করে পঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ানো হতো। শতাধিক ছাত্র নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ভালোভাবে চলা অবস্থায় ২০১৩ সালের ৫ মে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আশরাফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের নিয়ে হেফাজতে ইসলাম কর্তৃক মতিঝিল শাপলা চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেন। এরপর বেশকিছুদিন ওই প্রিন্সিপাল নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এসময় তার অনুপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকায় উক্ত মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম ও নামাজ আদায়সহ এবাদত বন্দিগি বন্ধ হয়ে যায়। এসময় মসজিদের মাইকসহ অন্যান্য জিনিসপত্র খোয়া যেতে থাকে।
সরেজমিনে মাদ্রাসাটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, সেখানে মাওলানা আশরাফ কমপ্লেক্স নামে কয়েকটি ব্যানার লাগানো রয়েছে। ভিতরে একটি কক্ষে সেলফে কিছু কোরআন শরীফ রয়েছে। একটি কক্ষে ছাগল পালন ও দুটি কক্ষে ভাড়াটিয়া পাওয়া গেছে। স্থানীয় বেলায়েত হোসেন বলেন, এই মাদ্রাসায় শতাধিক ছাত্র ছিলো। পড়ালেখার পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ানো হতো। হঠাৎ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিয়ে জমিসহ পুরো স্থাপনা আত্মসাৎ এর চেষ্টা চালায় মাওলানা আশরাফুল ইসলাম। প্রতিবেশী ফরহাদ হোসেন জানান, আব্দুল বিশ্বাস ও মোঃ চাঁন মিয়া নামে দুই ব্যক্তি জমিটি মাদ্রাসার জন্য ওয়াক্ফ করে দিলেও এখানকার প্রিন্সিপাল সেটি বন্ধ করে নিজের নামে মিথ্যা ঘোষনাপত্র দলিল করে এটি আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে। এছাড়া এখানে কবিরাজি চিকিৎসার নাম রাত-বিরেতে নারীদের নিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে।
ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া বলেন, মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আশরাফ নিজের নামে ঘোষনাপত্র দলিল করে মাদ্রাসা বন্ধ করে সেখানে আত্মীয়স্বজন নিয়ে বসবাস করছিলো। মাদ্রসার কক্ষে মুরগী ও ছাগল পালনসহ দুটি কক্ষ ভাড়া দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়ে এলাকাবাসীরা জানতে চাইলে সে একটি তারিখ দিয়ে অনুপস্থিত ছিলো। পরবর্তীতে বিষয়টি পৌর মেয়র এবং কাউন্সিলরকে জানানো হলে আবারও শালিশের আয়োজন করা হয়। শালিসে প্রিন্সিপাল তার দখলের পক্ষে কাগজ দেখানে না পারায় এখান থেকে চলে যান। সাভার পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুজ্জামান খাঁন বলেন, মসজিদ-মাদ্রাসার জন্য দানকৃত জমি ও স্থাপনা জালজালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নামে কাগজ তৈরী করে আত্মসাৎ এর পায়াতারা করেছিলো মাওলানা আশরাফুল ইসলাম। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডেরও অভিযো রয়েছে। এলকাবাসাীদের বাঁধার মুখে অবশেষে প্রায়া এক যুগ পর কাগজপত্র দেখে শালিশী বৈঠকের মাধ্যমে মাদ্রাসার জমি ও স্থাপনা উদ্ধার করা হয়েছে। এখন থেকে একটি কমিটি করে এলাকাবাসীরাই সেটি পরিচালনা করবেন।
Leave a Reply