সংবাদ রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দেখা করেছেন সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম সামসুদ্দোহা খান মজলিশের কনিষ্ট কন্যা ইলোরা খানমজলিশ ইলা। তিনি তার মা মোসা. সেলিমা খানমজলিশ হত্যা মামলার বিচার চেয়েছেন। প্রায় ১২ বছরেও এই খুনের মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ১২ এপ্রিল বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় তিনি তার একমাত্র কন্যা এবং এক নিকট আত্নীয়কে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। দীর্ঘ আলাপচারিতায় মায়ের খুনের সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করা ছাড়াও ইলা রাজনীতিতে সক্রিয় হতে প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদ চান। ইলা জানান, প্রধানমন্ত্রী তার আগ্রহে খুশি হয়ে দেশে থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন। সেসময় তারা মরহুম খানমজলিশের কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। কেউ কেউ সেলিমা খানমজলিশ খুনের মামলা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন এমন আলাপও হয়েছে সেখানে। মামলার ডকেট কিভাবে গায়েব হলো সে প্রসঙ্গও আলোচনায় উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রী তাদের ব্যাপারে বিচলিত না হয়ে সাহসের সঙ্গে পথচলতে ইলাকে দিকনির্দেশনা দেন। এসময় ইলা তার মায়ের খুনের বিচার চেয়ে একটি লিখিত আবেদন প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে তাকে আশ্বাস দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী তার দপ্তরের কর্মকর্তাদের ব্যাপারে ইলার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গত, ১২ বছরেও সেলিমা খানমজলিশ হত্যার ক্লু মিলেনি। পুলিশ, ডিবি, সিআইডি হয়ে মামলার তদন্তভার পিবিআইয়ে ন্যস্ত হলেও রহস্যের কূলকিনারা হচ্ছে না। নিহতের সন্তানরা এনিয়ে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। সম্প্রতি, নিহতের দুই মেয়ে পারভীন খান মজলিশ ও ইলোরা খান মজলিশ দ্রুত তদন্ত নিষ্পত্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেন।

নিহতের মেয়েরা দাবি করেছেন, ২০১১ সালের ১৪ জুন সাভারের দক্ষিপাড়ার বাসায় প্রতিবন্ধী পুত্রের সামনে নৃশংসভাবে সেলিমা খান মজলিশকে জবাই ও পেটে দুটি ছুরিকাঘাত করে হত্যার ১১ বছর পরও খুনি কে বা কারা তা কেউ জানতে পারছে না। খুনের কারণও অজানা। ঘটনাস্থল উদ্ধারকৃত ছুরি, রক্তমাখা গ্লাসের ফরেনসিক পরীক্ষা, ঘটনার পর উপস্থিত লোকজনের ফিঙ্গার প্রিন্ট টেস্ট, আশপাশের বাসিন্দাদের জবানবন্দি গ্রহণ ও পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের দাবি করেন তারা। এমনকি এজাহারে কোনো অসঙ্গতি ছিল কি না বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু বাদ পড়েছে কি না তা যাচাই-বাছাইয়েরও দাবি করেন তারা। হত্যাকারী যে বা যারাই হোক না কেন তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

স্থানীয়দের দাবি, সেলিমা খান মজলিশ যখন রক্তাক্ত অবস্থায় বাসার ভেতরে পড়ে ছিলেন সেখানে নিচতলার গৃহকর্মী সরলার স্বামী কী কারণে উপস্থিত ছিলেন সেই প্রশ্নের সদুত্তর মিলছে না। এমনকি নিহতের কয়েকজন স্বজনকে ঘিরে অনেক সন্দেহ ঘুরপাক খেলেও তদন্তে গতি মিলছে না।

উল্লেখ্য, সেলিমা খান মজলিশ খুনের পর তার ছোট ভাই মো. শাফিউর রহমান খান শাফি বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরের পর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেলিমা খান মজলিশ মারা যান। সাভার পৌর এলাকার আনন্দপুর পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।