1. kamruzzaman78@yahoo.com : kamruzzaman Khan : kamruzzaman Khan
  2. ssexpressit@gmail.com : savarsangbad :
বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন

প্রচারণায় অংশ নিলেও খোলস পাল্টাবে অনেকে !

  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সংবাদ রিপোর্ট : দরজায় কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ছাড়াও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশী। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নেমেছেন প্রচারনায়। তাদের পাল্টাপাল্টি শো-ডাউনে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ ছাড়াও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এর সুযোগ নিচ্ছেন। ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড কমিটির নেতারাও গ্রুপিংয়ে সরব হয়েছেন। বিশেষ করে আশুলিয়া অঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখন রমরমা। আশুলিয়ায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের বলয় বাড়াতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং গণমাধ্যমে প্রচারনা চলছে। কদর বেড়েছে নামসর্বস্ব ও ভুয়া কথিত সংবাদকর্মীদের। নেতাকর্মীরা কার পক্ষে কে এনিয়ে চায়ের টেবিলে বইছে ঝড়, উড়ছে টাকা। তবে অনেকে ইচ্ছায় অনেকে অনিচ্ছায় আবার অনেকে নিজের রাজনৈতিক অঙ্কের যোগ বিয়োগ হিসেবে করে পক্ষ নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে দলীয়ভাবে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হলে এবং সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় খোলস পাল্টাবে অনেকে।

জানা গেছে, ঢাকার পাশের এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু আহমেদ নাসিম পাভেল আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য প্রচারনায় আছেন। দল প্রয়োজন মনে করে মনোনয়ন দিলে লড়তে প্রস্তুত নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত সাভার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব। তবে তিনি নিজে সরাসরি প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ জানিয়ে কোন ঘোষণা দেননি। মনোনয়নের আশায় আছেন সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো: তৌহিদ জং মুরাদ। তিনিও প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এমন কোন ঘোষণা দেননি।

নেতাকর্মীদের মতে, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগে সভাপতি ফারুক হাসান তুহিনের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলামের স্নায়ুযুদ্ধ পুরানো। কর্মীরা মনে করেন আধিপত্য ও গার্মেন্টস কারখানার ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের এই বিরোধ। এর মধ্যে থানা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ আরো বেড়েছে। সাইফুল ইসলাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত। ধামসোনা পৌরসভা হবে ডা. এনামুর রহমানের এমন ঘোষণা ও ডিও দেওয়ার পর আশায় বুক বেঁধেছিলেন সাইফুল। এর মধ্যে আটকে যায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও। তবে বিধিবাম, নানা বিরোধ ও আপত্তিতে ধামসোনা পৌরসভা গঠনের সম্ভবনা ফিকে হয়ে গেছে। বিশাল শ্রমিকগোষ্ঠী নিয়ে গঠিত ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম এখন সংসদ সদস্য হওয়ার দৌঁড়ে মাঠে নেমেছেন অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে। এতোদিন আশুলিয়া অঞ্চল থেকে আওয়ামী লীগের একক মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ফারুক হাসান তুহিন। এবার সাইফুলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

দলীয় সূত্রের খবর, ১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন সাইফুল ইসলাম। সেখানে শ্রমিকদের ৩৫টি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি, দুই শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা তার প্রতি সমর্থন জানান। উপস্থিত ছিলেন দু’জন ইউপি চেয়ারম্যানও। এর দু’দিন পর ১৭ সেপ্টেম্বর রবিবার দুপুরের পর বিপুল জমায়েতের মাধ্যমে শিমুলিয়া ইউনিয়নে গণসংযোগ করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে ঘোষণা দেন ফারুক হাসান তুহিন। আশুলিয়ার শীর্ষ দুই নেতার এমন অবস্থানে বিপাকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। সাইফুলের সঙ্গে তুহিনের পুরানো মিত্র পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান এবং ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুমন আহম্মদ ভূঁইয়াকে দেখা গেছে। সঙ্গে ছিলেন ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাদের দেওয়ান। অন্যদিকে তুহিনের সঙ্গে হাটছেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন খাঁন, আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন মাদবর ও শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম আজহারুল ইসলাম সুরুজের (তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন) স্বজন এবং পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফয়জল হক, শিমুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন মধু ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন। নেতাকর্মীদের দাবি, তুহিনের সঙ্গে সাইফুলের বিরোধ খানিকটা সামনে আসে ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উপনির্বাচনে। গত বছরের শেষদিকে ইউপি চেয়ারম্যান ও দলের প্রবীণ নেতা সৈয়দ আহম্মদ ভূঁইয়া (সৈয়দ মাস্টার) মারা যান। ২৯ ডিসেম্বর সেখানে উপনির্বাচন হয়। এ জন্য দলের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন সৈয়দ মাস্টারের ছেলে শামীম আহমেদ ভূঁইয়া সুমন। তবে মনোনয়ন পান ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন মুসা। সুমন ও তার ঘনিষ্টরা এজন্য তুহিনকে দায়ী করেন। পরে সুমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। আনারস প্রতীকে তিনি ভোট পান ১১ হাজার ৬২০। নৌকার প্রার্থী মোশারফ মুসা পান ৮ হাজার ৫৬৮ ভোট। ওই নির্বাচনে সুমন ভূঁইয়াকে গোপনে সমর্থন করেন সাইফুলসহ উপজেলা ও থানা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। গুঞ্জন উঠে সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমানের ভূমিকা নিয়েও। এর মধ্য দিয়ে তুহিন- সাইফুল সম্পর্কে তিক্ততা চরমে পৌছে। তাদের অনুসরণ করা অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল ইসলাম বলেন, আটটি ইউপি ও একটি পৌর এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৯ আসন। সাভার পৌরসভা ও তিন ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৩ হাজার। আশুলিয় থানার অন্তর্গত পাঁচ ইউপিতে ভোটার ৫ লাখ ১৬ হাজার। তিনি যে ইউপির চেয়ারম্যান, সেই ধামসোনায় ১ লাখ ৯৬ হাজার ভোটার রয়েছেন। তিনি বলেন, শিল্প এলাকা হওয়ায় এখনো দেশের নানা প্রান্তের লোকজন বসবাস করেন। তিনিও ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে তাদের সেবা দিয়ে আসছেন। শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি, দুই শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা তাকে নির্বাচনে আসতে উদ্বুদ্ধ করছেন। তবে তিনি বলেছেন, যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে তিনি তার পক্ষেই কাজ করবেন।

ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইতে বলেছেন। আমি চেষ্টা করেছি সবাইকে নিয়ে কাজ করার। মনোনয়ন দেবেন দলীয় সভানেত্রী। আওয়ামী লীগ বড় দল, এই দলে নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগীতা থাকবে এটা স্বাভাবিক। তিনি বলেন, শুধু নির্বাচন সামনে রেখেই নয়, তিনি সবসময়ই জনসংযোগ করেন বলেও জানান।

ফারুক হাসান তুহিন বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু পাননি। দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তার জন্য সর্বস্ব দিয়ে কাজ করেছেন জানিয়ে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একাধিক জরিপের প্রতিবেদন রয়েছে। জনপ্রিয়তা বিবেচনায় সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবেন তিনি তার জন্য কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন। তুহিন বলেন, দিনে দিনে তাদের সঙ্গে দলের আরো অনেকে হাটবেন, জড়ো হবেন লাখো মানুষ।

আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু আহমেদ নাসিম পাভেল মোটর শোভাযাত্রা করে শোডাউন করেছেন। তিনি বলেছেন, যোগ্যতা বিবেচনায় দল তাকে মনোনয়ন দিলে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র হাজি আব্দুল গনির জেষ্ঠ্যপুত্র তুহিন। সেই হিসেবে পৌর আওয়ামী লীগে তুহিনের শক্ত বলয় রয়েছে। তুহিনের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত সাভার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল রানা। তবে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে তিনি নিষ্ক্রিয়। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম মানিক মোল্যা এবং পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমানের ঘনিষ্ট। বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম মন্ডলও ডা. এনামুর রহমানের ঘনিষ্ট। এনামের আরেক শুভাকাঙ্খী সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু দেওয়ান। বনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীবের আশীর্বাদপুষ্ট। নির্বাচনের কয়েকমাস আগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, হকার্স লীগ, শ্রমিক লীগ নেতাকর্মীরা। তবে দলীয় প্রধানের সবুজ সংকেত যিনি পাবেন তার দিকে শেষ মুহুর্তে ঝুঁকবে পাল্লা। অনেকে পাল্টাবে খোলস।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ :