সংবাদ রিপোর্ট: নদী ও পরিবেশ নিয়ে নানা অভিযোগের ভিত্তিতে সাভার চামড়া শিল্পনগরী পরিদর্শনে এসে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, সাভারের মাটি, পানি ও বাতাস দূষিত হয়ে গেছে। এখানে আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটারেরও নাকি ইনজেক্ট করা হয় বর্জ্য। সুতরাং আমি মনে করি সাভার অভিশপ্ত জনপদে পরিণত হতে যাচ্ছে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। ২৫ জুলাই সোমবার সকালে সাভার চামড়া শিল্পনগরী, ধলেশ্বরী নদীসহ সংযুক্ত খাল-বিল, জলাশয় ও জলাধারের দূষণের বাস্তব অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে সাভার ট্যানারি শিল্প এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে চলা ধলেশ্বরী নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। অনেক অভিযোগ আছে। সাভার চামড়া শিল্প নিয়ে প্রায় সময় পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়। নানা মহল থেকে কথা আসে যে এইখানে ধলেশ্বরী নদী তারা দূষণ করছে। দুষণের ফলে বংশী নদী এবং বুড়িগঙ্গা নদীও দুষণ হচ্ছে। কারণ বংশী নদী এবং বুড়িগঙ্গার সঙ্গে এই নদীর সংযোগ রয়েছে। যার ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা বলা হয়। আমরা সরেজমিনে এসে খুব একটা আস্বস্ত হতে পারলাম না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর প্রধান কারণ হচ্ছে এখানে যেসব তথ্য বলা হয়েছে সেসব তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে আমার সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এখানে ধরতে গেলে ল্যাবই নাই, বিষয়টাকে আমি সরকারি উচ্চ মহলে বলব, যাতে এইখানে আধুনিক ল্যাব স্থাপন করা হয়। ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে এইখানে যে পরিমাণ চামড়া প্রসেস করা যায় তার তার চেয়ে অনেক বেশি চামড়া আসে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওনারা আমাদের আশ্বস্ত করতে পারেন নাই। এখানে অপরিশোধিত পানি, বর্জ্য রিলিজ করা হয় না। এই বিষয়ে আমি কিন্তু এখনো আস্বস্ত না। এটার জন্য আরও বেশি তদন্ত করার দরকার আছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা প্রিলিমিনারি একটা সরজমিনে পরিদর্শন করে গেলাম। আগামী ১০ দিনের মধ্যে যত স্টেক হোল্ডার আছে, যারা চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত, পরিবেশের সঙ্গে জড়িত তাদের নিয়ে আমরা একটা মিটিং করব। এরপর রিকমেন্ডেশন দিব। আপাতত ওনাদের (চামড়ার সাথে জড়িতদের) বলে যাচ্ছি রেশনিং প্রথা চালু করতে। যাতে কোনোভাবেই ২৫ হাজার কিউবিক মিটারের বেশি বর্জ্য না হয়। যদি এই ম্যানেজমেন্ট না পারে তাহলে নতুন ম্যানেজমেন্ট আনার রিকমেন্ড করব। এখানে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য হলে কিন্তু চামড়া শিল্প কয়েকধাপ এগিয়ে যাবে। কিন্তু সে বিষয়ে এদের কোনো উদ্যোগ দেখলাম না। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আমরা একটা ঘোষণা দিয়েছি, আগামী ২০২৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের আগে আমরা ঢাকার চারপাশে সব নদ-নদী দূষণ মুক্ত করব। সেই উদ্দেশ্যে আমরা কিন্তু প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। এদিকে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কোম্পানি। এ সময় উপস্থিত থাকা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ বলেন, আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে ল্যাবের সমস্যা সমাধান হবে। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার সিইটিপির ২৫ হাজার কিউবিক মিটার তরল বর্জ্য পরিশোধের সক্ষমতা থাকলেও সেখানে ৩২ হাজার কিউবিক মিটার তরল বর্জ্য আসে। পাশাপাশি সিইটিপিতে সক্ষমতার চেয়ে বেশি তরল বর্জ্য পরিশোধের বিষয়টি সমাধানের জন্য ট্যানারি মালিকসহ বাংলাদেশ ট্যার্নাস অ্যাসোসিয়েশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার তারা বন্ধ করেন। তবে সিইটিপির পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। বিকেলে সাভার উপজেলার হলরুমে উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় যোগদান করে বিভিন্ন সমস্যা শুনে সাভারের নদী ও পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন মনজুর আহমেদ চৌধুরী । এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের উপপরিচালক জনাব মো. আখতারুজ্জামান তালুকদার, উপপরিচালক ড. খম কবিরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক জনাব মো. তৌহিদুর রহমানসহ কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাভার নদী রক্ষা কমিটির সদস্যবৃন্দ, সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।
Leave a Reply