সংবাদ রিপোর্ট : সাভারে ভূমি জরিপের নামে শত শত লোককে জিম্মী করে টাকা আদায়ের এন্তার অভিযোগ উঠেছে। টাকা না দিলে একের জমি অন্যের নামে রেকর্ড করা হচ্ছে। বিএস (বাংলাদেশ সার্ভে) জরিপের নামে চলছে রাম রাজত্ব। জরিপ কার্যক্রমকে ঘিরে ক্যাম্প অফিসে দিনভর দালালদের আনাগোনা থাকায় সাধারণ মানুষ নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। ঝামেলা এড়াতে লেনদেন সারলে থাকছে না কোনো ঝক্কি। এ অবস্থায় ভুক্তভোগীরা দৌঁড়ঝাপ করে সুফল না পেয়ে স্বত্ব পেতে মিসকেস করছেন। যার সংখ্যা কয়েক’শ। অভিযোগ প্রসঙ্গে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) এ টি এম নাসির মিয়া পরিচালক (ভূমি জরিপ) মো. এজাজ আহমেদ জাবেরের বক্তব্য চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। সাভার উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের উপ-সহকারি সেটেলমেন্ট অফিসার মো. লোকমান হোসেন সাভার সংবাদকে বলেন, তিনি কারো কাছ থেকে কোনো ধরনের অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাভারের সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে সাভার পৌর এলাকার কয়েকটি মৌজায় মৌজায় বিএস জরিপের কাজ চলছে। এর আগে গেণ্ডা, দক্ষিণ বক্তারপুর, কাঞ্চনপুর, উত্তর কাউন্দিয়াসহ কয়েকটি মৌজায় বিএস জরিপের নামে সংশ্লিষ্টরা কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। পৌর এলাকার দক্ষিণ দরিয়াপুর মৌজার কাজ ২০১৬ সালে শুরু হলেও ডিসপোর্ট জমির পরিমাণ (একজনের জমি অন্যজন দাবিদার) বেড়ে যাওয়ায় তা বাতিল করা হয়। এই মৌজায় গত কয়েক মাস আগে নতুন করে পর্যায়ে ডিজিটাল জরিপের কাজ শুরু হলে খাস সম্পত্তি, ভিপি সম্পত্তি এমন নানা অজুহাতে সংশ্লিস্টরা জমি মালিকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতাচ্ছেন। টাকা না দিয়ে বিএস জরিপ সম্পন্ন করিয়েছেন এমন ‘সৌভাগ্যবান’ কেউ নেই বলে জানা গেছে। জানা গেছে, দক্ষিণ দরিয়াপুর মৌজার জন্য খানাপুরি কাম বুঝারত ক্যাম্প অফিস করা হয়েছে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেঙ্গল ফাইন সিরামিকসের পূর্বপাশে পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ’র পুরানো বাড়িতে। সেখানে এই মৌজার কাতলাপুর, ভাগলপুর, তারাপুর, টেইকাপাড়া, সিরামিকস, মুক্তির মোড়, তালবাগের একাংশ ও দক্ষিপাড়ার একাংশসহ কয়েকটি মহল্লার কয়েক হাজার প্লটের জরিপ কার্যক্রম চলছে। ক্যাম্প অফিসসে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দালালরা গিজগিজ করে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সার্ভেয়ার মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, ইকরাম উদ্দিন মূলত জরিপের নামে এখানে টাকা কামানোর মেশিন খুলে বসেছেন। আনোয়ার নামে আরেক স্টাফ ও একদল দালাল মিলে চুক্তিতে নানা অজুহাতে একের জমি অন্যের করছে। জমি এবং বাড়ি যুগ যুগ ধরে দখলে আছেন এমন ব্যক্তির জমিও মাপে কম আছে বলে টাকা নেয়া হচ্ছে। ফ্ল্যাট মালিকদের কাছ থেকে একরেট ২৫ হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে। কাতলাপুর মহল্লার বাসিন্দা সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলেয়া আক্তার পরী অভিযোগ করেছেন, দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় তার ৩ শতাংশ জমি প্রতিবেশীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তার নামে রেকর্ড দেয়া হচ্ছে। ভাগলপুর মহল্লার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেছেন, টাকার বিনিময় তার বাড়ির দুই শতাংশ জমি অন্য ভাইদের নামে রেকর্ড দিয়ে বিরোধ বাধিয়ে দিয়েছে জরিপকারীরা। ওই এলাকার অনেক জমি ভিপি ও খাস খতিয়ানভুক্ত দেখানো নিয়ে হইহট্রগোল চলছে কয়েক মাস ধরে। তারাপুর চকের বাসিন্দা মজনু মিয়া বলেছেন, দালালরা দাবি করছেন ‘সার্ভেয়াররা ঢাকা থেকে চুক্তিতে কাজ এনেছেন। সেই টাকা তুলে তাদের লাভ করতে হবে।’ বাড়ি করে বসবাস করছেন অথচ তার এক শতাংশ জমি পাশের জনকে দেয়ার কাজ করছে জরিপকারীরা। রাজাবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা মঞ্জু মিয়া বলেছেন, আগস্টে জরিপ শুরুর পরই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। প্রসঙ্গত, এর আগে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে সার্ভেয়ার আক্তার হোসেনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। এরপরও ভোগান্তি ও হয়রানি কমছে না, বরং বাড়ছে।
Leave a Reply