কামরুজ্জামান খান, সৌদি আরবের মক্কা থেকে : সৌদি আরবে যারা হজ কিংবা ওমরা হজ পালন করতে আসেন তাদের সবার কাছে একটি পরিচিত নাম হালাকা। এখানে মূলত দুম্বা এবং উট বিক্রি। এমনিতে প্রতি শুক্রবার বিকেলে নিলামের মাধ্যমে মাইকিং করে এসব বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া কোরবানির সময় প্রতিদিনই বিক্রি হয় দরদাম করে। তাছাড়া কসাই এবং বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য হালাকা এলাকায় কেনা যায় দুম্বা এবং উট। সরজমিনে হালাকার উট-দুম্বার হাট ঘুরে জানা গেছে, একটি উট সাড়ে তিন হাজার থেকে সাত হাজার রিয়াল পর্যন্ত সাইজ অনুযায়ী বিক্রি হয়ে থাকে। দুম্বা ৫০০ থেকে আড়াই হাজার রিয়াল পর্যন্ত বিক্রি হয়। যার ওজন হয় ২০ থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত। ছাগলের মতো দেখতে ‘বরবরী’ বিক্রি হয় ৩০০-৫০০ রিয়ালে। যার ওজন ১০ থেকে ১৫ কেজি। রাম ছাগলের মত দেখতে ‘সোহাগিনী’ বিক্রি হয় ১২০০ থেকে ১৫০০ রিয়াল। এর ওজন ২৫ থেকে ৩০ কেজি হয়। মূলত কসাই এবং সাধারণ মানুষ এসবের ক্রেতা। হালাকার একাধিক উট ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, এখানকার বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠানের জন্য বড় বড় কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। ধনীদের বিয়ের অনুষ্ঠানে আস্ত একটি উট একবারে বিশেষ পদ্ধতিতে ক্রেন দিয়ে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে রান্না করা হয়। বড় এক প্লেটে তা পরিবেশন করা হয়। পর্যায়ক্রমে ২০ জন করে বসে তা গ্রহণ করেন। একইভাবে একটি আস্ত দুম্বা একসঙ্গে রান্না করা হয় বিশেষ পদ্ধতিতে। একই কায়দায় একটি প্লেটে তা পরিবেশন করা হয়। বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠান ছাড়াও প্রতিদিনই উট- দুম্বা বিক্রি হয় সাধারণ মানুষের কাছে। বিশেষ করে কারো হজ বা উমরার কোন ওয়াজিব নষ্ট হলে দুম্বা কিনে দম দিতে হয়। সৌদি আরবে কর্মরত একাধিক বাংলাদেশী জানান, হালাকার হাট থেকে উট দুম্বা কেনার পর সরকার নির্দিষ্ট নেওয়া হয়। দুম্বা জবাই এবং মাংস বানানোর জন্য সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ রিয়াল সরকারি কোষাগারে দিতে হয়। উট জবাই এবং মাংস বানানোর জন্য ১৫০০ থেকে আড়াই হাজার রিয়াল দিতে হয়। কুরবানীর সময় এ খরচ বাড়ে। বাংলাদেশের মতো এখানেও আছে মৌসুমী কসাই। যাদের অধিকাংশই প্রবাসী বাংলাদেশী।
সরকার নির্ধারিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই কসাইখানায় সার্বক্ষণিক রয়েছে পশু চিকিৎসক এবং পরিচ্ছন্ন কর্মী। এখানে ব্যক্তিগতভাবে কোথাও পশু জবাই করার কোন সুযোগ নেই। কেউ তা করতে গেলেই তাকে জেল জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়।
হালাকা বাজারের দিনরাত ২৪ ঘন্টা এসব পশু বিক্রি হয়ে থাকে। আশপাশে অনেক গেরস্থ বাড়ি রয়েছে যারা এসব লালন পালন করে থাকেন। হাতের মধ্যেও এদের লালন পালনের জন্য লোক রয়েছে। বড় বড় ট্রাকে করে এসব পশুর জন্য নিয়মিত ঘাসসহ অন্যান্য খাবার আনা হচ্ছে। কেউ চাইলে হাটের মধ্যে পাওয়া যায় উটের দুধ। ওমরা এবং হজ করতে আসা লোকজনের অনেককে প্রতিদিন উট এবং দুম্বা দেখতে যান হালাকা বাজারে।
Leave a Reply