সংবাদ ডেস্ক: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রমনা থানায় করা মামলায় জামিনে কারামুক্ত হলেন প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান। ৩ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ। সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, আদালত থেকে সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বেলবন্ড (জামিননামা) অফিসিয়ালি আমাদের কাছে পৌঁছানোর পরে সব নিয়ম মেনে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। অফিসিয়াল কার্যক্রম শেষে ৬ টা ২২ মিনিটে তিনি কারাগার থেকে বের হয়েছেন। এর আগে সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নুরের আদালতে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেন। শামসুজ্জামানের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার জামিন শুনানিতে বলেন, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় ফুল বিক্রেতা এমন ১২/১৩ জনের বক্তব্য আর একজন দিনমজুরের বক্তব্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ মামলার অভিযোগ কোনোভাবেই সত্য না। হয়রানির উদ্দেশ্যে এ মামলাটি করা হয়েছে। মামলা না করে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ দেওয়া যেতে পারতো। কারাগারে আটক শামসুজ্জামানের জামিন প্রার্থনা করছি। জামিনের বিরোধিতা করে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু শুনানিতে বলেন, যারা স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না তারা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের উদ্দেশ্যে এসব কাজ করছে। এ মামলার বিষয়বস্তু অনুযায়ী আসামি অপরাধ করেছে। এ মামলায় আসামির জামিনের বিরোধিতা করছি। শুনানিতে আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী নজিবউল্লাহ হিরু বলেন, দেশের যখন স্বাধীনতা ছিল না তখন স্বাধীনতার জন্য কথা বলা হয়েছে। এখনকি দেশে ভাতের স্বাধীনতা নেই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই সংবাদ প্রকাশিত করা হয়েছে। যার বক্তব্য প্রকাশ করা হলো সেই জাকির কোথায়। সরকারের ভালোটা তাদের চোখে পড়ে না। গত ৩০ মার্চ শামসুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রমনা মডেল থানার পরিদর্শক আবু আনছার। এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
২৯ মার্চ সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া নামে একজন বাদী হয়ে ডিএমপির তেজগাঁও থানায় সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরও একটি মামলা করেন। গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি ফটোকার্ডে একজন দিনমজুরের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়। কিন্তু সেই উদ্ধৃতির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় একটি শিশুর ছবি। দিনমজুরের উদ্ধৃতির সঙ্গে শিশুর ছবি প্রকাশের অসঙ্গতির বিষয়টি তুলে ধরে ১৭ মিনিটের মধ্যেই ফটোকার্ডটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে প্রত্যাহার করে সংশোধনী দেয় প্রথম আলো। এ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত ২৯ মার্চ অ্যাডভোকেট আবদুল মশিউর মালেক বাদী হয়ে রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, পত্রিকাটির সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস, সহযোগী একজন ক্যামেরাম্যান এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। রোববার এ মামলায় মতিউর রহমান হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন।
Leave a Reply