সংবাদ রিপোর্ট : ১০ বছর পর সাভারে ফিরে পুষ্পবৃষ্টিতে সিক্ত হলেন ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে তিনি সাভারে আসেন। মিরপুর উত্তর বিশিলের বাসা থেকে বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে বের হয়ে আমিনবাজারে আসতেই হাজারো ভক্ত তাকে সাধুবাদ জানান। ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর হোডখোলা পাজেরোতে করে মোটর সাইকেল ও গাড়ি বহর নিয়ে তিনি সাভার পৌর এলাকার শিমুলতলার বাসভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। জনতার ঢল ঠেলে কয়েক কিলোমিটারের এই পথ পাড়ি দিতে তার কয়েক ঘন্টা সময় লেগে যায়। এ সময় রাস্তার দুইপাশে হাজারো কর্মী-সমর্থক তাকে অভিবাদন জানান। ফ্লাইং কিচ (উড়ন্ত চুম্বন) করে করে তিনি এর জবাব দেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মুরাদের এই প্রত্যাবর্তনে প্রায় লাখো জনতা উপস্থিত ছিলেন। গোলাপ ও গাদা ফুলের পাপড়িতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পিচঢালা রাজপথ ভিন্ন রুপ পায়। প্রার্থী হয়ে সাভারে ফিরে পুরানো ঢংয়ে বক্তব্য দিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছেন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ।
এদিকে শিমুলতলার বাসভবনে পৌছে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রতিপক্ষের উদ্দেশে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘যে নেতা-কর্মীরা আমাদের নেতা-কর্মীদের ভয় দেখায় বলে আমি কই? আমি তাদের কই আইয়ো, আইয়ো, আইয়ো আমরা প্রস্তুত। কার মাজায় কত জোর মুরাদ জং সেটা জানে।…জানুয়ারির ৭ তারিখে আইয়ো। আমরা রেডি হয়েই রইছি ইনশাল্লাহ।’
ঢাকার পাশের এই আসন থেকে ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তৌহিদ জং। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার সঙ্গে সখ্যতার কারণে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন। এরপর থেকে এক দশক সময় ধরে সাভারের বাইরে ছিলেন তৌহিদ জং। বিচ্ছিন্ন ছিলেন স্থানীয় রাজনীতি থেকে। এই সময়ে দুইবার আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন ডা. এনামুর রহমান, যিনি বর্তমান সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। এবারো তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। আর দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তৌহিদ জং মুরাদ। ঈগল প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে প্রচারণায় নেমেছেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে তাঁর অনুসারীদের নিয়ে সাভারের শিমুলতলায় আসেন তৌহিদ জং মুরাদ। সেখানে ‘দরবার এ জং’ নামের রাজনৈতিক কার্যালয় উদ্বোধন করেন। পরে বেলা তিনটার দিকে কার্যালয়ের একটি অংশের ছাদে দাঁড়িয়ে উপস্থিত কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। এ সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকাগামী সার্ভিস লেন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, যা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। ভাষণে তৌহিদ জং মুরাদ বলেন, ‘অনেকেই কয়, অনেক বড় বড় নেতায় কয় নির্বাচনে তারা এই করবো ওই করব। তারা দেইখা লইবো। আমরা কী হাতে চুড়ি পরছি? শেখ হাসিনার কর্মীরা কি চুড়ি পরছে? নৌকার যে প্রার্থী আছে সে জিতলেও মালা দিবো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গলায়, আমি পাশ করলেও শেখ হাসিনার গলায় মালা দিবো। তাহলে ঈগল মার্কা কার মার্কা? ঈগল মার্কাও শেখ হাসিনার আরেকটা মার্কা।’ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এতদিন চুপ ছিলেন উল্লেখ করে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘১০ বছর কথা বলি নাই। একদমই বলি নাই। ১০ বছর কোনো কথা কইছি? কোনো শব্দ করছি? ১০ বছর পরে আজকে এই সাভারে আসছি আপনাদের ডাকে সাড়া দিতে। প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালে এসে বলছেন, “কথা বলো, নির্বাচন করো। কে জনপ্রিয় আমি দেখতে চাই”।’ ভাষণে রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে নিজের দায় নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবও দেন তৌহিদ জং মুরাদ। তিনি বলেন, ‘আজকে আমি আপনাদের কাছে কিছু জিজ্ঞেস করতে আসছি। রানা প্লাজা আমি ফালাই ছিলাম? রানা প্লাজা কি আমার ছিল? রানা প্লাজার মালিক কি আমি? ওইটার ডিজাইন আমি করছি? ওইখানে আমার কোন ব্যবসা ছিল? একটা বিল্ডিং ভাইঙা পড়ছে এটায় আমার দোষ কোথায়? কি অপরাধ ছিল আমার?’
সাভারবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমার লিগা মায়া লাগে না? আমি আপনাদের ছেলে না? আমি আপনাগো ভাই না? প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বলছে নির্বাচন কর। আসেন কে জনপ্রিয় সাভার-আশুলিয়াবাসী, ৭ তারিখে ঈগল মার্কায় ভোট দিয়ে তার প্রমাণ দেবেন। ঈগল কি আমার মার্কা? ঈগল আপনাদের মার্কা।’ সাভারে নিজের বাড়ির কথা তুলে তিনি বলেন, ‘এই বাড়িটার নামের দিকে তাকান, দরবারে জং। এটা সাভার-আশুলিয়াবাসীর জন্য করছিলাম। ১০ বছর এই বাড়িটায় একদিনের জন্যও আসতে পারি নাই। যেদিন আমি জন্মাইছি, ত্যাড়া হইয়াই জন্মাইছি। কইছি, যেদিন প্রধানমন্ত্রী কইব সাভারে যাইতে ওইদিনই বাড়ি উদ্বোধন করব। কালকে মার্কা পাইছি আজকে আইছি।’
অপরদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় তৌহিদ জং মুরাদের আরচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে সাভার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, বিষয়টি জানার পরপরই দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়ক থেকে ওই প্রার্থীর সমর্থক ও নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি ওই প্রার্থী এবং তাঁর নির্বাচনী এজেন্টদের সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া ‘ভিজিল্যান্স টিম’ এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেটি তদন্ত কমিটির কাছে পাঠানো হবে।
আওয়ামী লীগের সাবেক প্রয়াত সংসদ সদস্য তালুকদার মোহাম্মদ আনোয়ার জংয়ের ছেলে মুরাদ জংয়ের সাভারে আসার খবরে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পিকআপ ভ্যান, ট্রাক, মোটরসাইকেল যোগে হাজারো নেতাকর্মী সাভারের শিমুলতলা এলাকায় জড়ো হন। এ সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিপিএটিসি বাসস্ট্যান্ড থেকে বলিয়ারপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। মুরাদ জংয়ের জনসমাবেশে সাভারের আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশের উপস্থিতি দেখা গেছে। সাভারের প্রবেশের পর থেকে নিয়মিত প্রচারনায় রয়েছেন মুরাদ জং। ২০ ডিসেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় গণসংযোগ শেষে তিনি সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ কবীরের নিরিবিলি এলাকার বাড়িতে গিয়েছেন।
Leave a Reply