সংবাদ রিপোর্ট : সাভারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হারে অবনতি হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস থেকে সাভারে ছিনতাইকারীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সর্বস্ব কেড়ে নিতে মারমুখী হয়ে উঠেছে পেশাদার ছিনতাইকারীরা। সাভার পৌর এলাকার গেন্ডা, উলাইল, মডেল মসজিদ, বাজার বাসস্ট্যান্ড, শিমুলতলা, সিএন্ডবি, নবীনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। মূলত সন্ধ্যার পর থেকেই ছিনতাই বেড়ে যায়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিনতাই রোধে নানা পদক্ষেপের কথা বলছে। তবে এখনো দৃশ্যমানভাবে কমেনি ছিনতাই। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে পুলিশ-ডিবি ও র্যাব পুরোদমে কাজে না ফেরার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। ঘনবসতির এই নগরে ভাসমান মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অপরাধ করে করে তারা সটকে পড়ছে অন্যত্র। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ না করায় ছিনতাইয়ের অধিকাংশ ঘটনা থানা পুলিশের অগোচরে থেকে যাচ্ছে। চেষ্টা এবং আন্তরিকতা থাকলেও বাহন ও জনবল সংকটে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে পুলিশ অভিযান জোরদার করতে পারছে না বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তারা। এদিকে মাদক কারবারও বেড়েছে। পুলিশের তৎপরতা কমে যাওয়ায় ইয়াবা, গাঁজা বিক্রি বেড়েছে। বিদেশী ব্রান্ডের নকল ও ভেজাল মদও বিক্রি হচ্ছে দেধারছে। দেশী বাংলা বা চোলাই মদ মিলছে হাতবদল হলেই। মোটরসাইকেলযোগে এবং অলিগলিতে হরদম বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের মাদক। উঠতি যুবক ও তরুণরা মাদকের নেশায় বুদ হচ্ছে। তারাই জড়াচ্ছে ছিনতাইসহ নানা অপরাধে। সন্ধ্যার পর পুলিশ টহল দৃশ্যমান না থাকায় থানা রোড, তারাপুর মাঠ, ব্যাংক কলোনী, গেন্ডা খোলার ঘাট, টিয়াবাড়ি, নামাবাজার সড়ক, ধরেন্ডা, সাধাপুর, বেদেপাড়া, মজিদপুর, বাড্ডা ভাটপাড়া, নিমেরটেক, কলমাসহ পাড়া মহল্লার অলিগলিতে হাত বাড়লেই মিলছে মাদক। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বিকিকিনি চলছে মাদক। দাম বেশি হলেও এখনো অনেকে সেবন করে ফেনসিডিল। পুলিশ-ডিবি ও র্যাবের খাতায় তালিকাভুক্ত মাদক কারবারিরা আবার ফিরেছে পুরানো রুপে।
জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারি বুধবার ভোরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজারের সালেহপুর এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সয়াবিন তেলভর্তি একটি পিকআপ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার শিকার মানিকগঞ্জের ব্যবসায়ী ঝন্টু সাহা অ্যান্ড সন্সের মালিক টিটু সাহা জানান, ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে সোনারগাঁওয়ের মেঘনা মিল থেকে ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ৬০ ড্রাম সয়াবিন তেল নিয়ে একটি পিকআপে মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হন। ভোর ৪টার দিকে পিকআপটি সালেহপুর ব্রিজে পৌঁছালে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একটি মাইক্রোবাস পিকআপের গতিরোধ করে। এ সময় মাইক্রোবাস থেকে নেমে দুর্বৃত্তরা গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চায়। কাগজ বের করার পরপরই ৮-১০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। চালক ও তার সহযোগীকে মারধর করে এবং তাদের নেশাজাতীয় পানীয় খাইয়ে অচেতন করে। এরপর চালকের সঙ্গে থাকা নগদ ১৬ হাজার টাকা, দুটি স্মার্টফোন এবং তেলভর্তি পিকআপটি হেলপারসহ নিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিপিএটিসির ওয়েলকাম পরিবহন নামের একটি চলন্ত বাসে যাত্রীবেশে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ছিনতাইকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে চারজন আহত হয়েছেন। বাসের যাত্রী হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আমি সাভার উলাইল থেকে ওয়েলকাম বাসে উঠি। বাসটি সাভার বাসস্ট্যান্ড পার হলে যাত্রীবেশে থাকা কয়েকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কয়েকজন যাত্রীকে জিম্মি করে ফেলে। এ সময় বাসে থাকা যাত্রীদের মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তখন কয়েকজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়’ বলে জানান তিনি। এর আগে ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের নিউমার্কেটে ছিনতাইকারীর এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে আসাদুজ্জামান নামে এক বাসের যাত্রী নিহত হয়েছেন। নিহত আসাদুজ্জামান রংপুর জেলার তারাগঞ্জ থানার হারিয়ারকুঠি গ্রামের আবু বক্করের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ভোরে নিউমার্কেটের সামনে ঢাকাগামী একটি দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস থেকে নেমে হাঁটছিলেন আসাদুজ্জামান। এ সময় ছিনতাইকারীরা তার গতিরোধ করে। পরে তাকে ছুরিকাঘাত করে তার কাছে থাকা নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। নিহত আসাদুজ্জামানের পাশে পড়ে থাকা মানিব্যাগ থেকে তার একটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেলেও মোবাইল কিংবা নগদ কোনো টাকা পাওয়া যায়নি। ছিনতাইয়ের বিষয়ে ঢাকার অতিক্তি পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবীর বলেন, ছিনতাইকারীদের ধরতে পুলিশ বিভিন্ন ধরণের অভিনব কৌশল গ্রহণ করেছে। সাভারের গেন্ডা, মডেল মসজিদ, বাজার বাসস্ট্যান্ড, শিমুলতলা, রেডি কলোনী, সিএন্ডবিসহ বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইকারীদের অবস্থান ছিল। সেসব স্থানে পুলিশ অবস্থান নিয়ে ছিনতাইকারীদের আটক করেছে। এছাড়াও যেসব স্থানে ছিনতাইকারীদের অবস্থান বেশী সেসব স্থানে পুলিশের টহল টিম বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
Leave a Reply