সংবাদ ডেস্ক : আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১ সালে সারাদেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট এক হাজার ৩২১ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৭ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন নয়জন। ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২১’ পর্যালোচনায় এ তথ্য জানায় সংগঠনটি। শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের এই তথ্য তুলে ধরে আসক। সংস্থাটির সহকারী সমন্বয়কারী অনির্বাণ সাহা তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০২০ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন মোট এক হাজার ৬২৭ নারী এবং ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪১৩ জন।
শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার পোড়াগাঁও গ্রামে গত ৯ অক্টোবর এক গৃহবধূ ও তার চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী গৃহবধূ থানায় আটজনকে আসামি করে মামলা করেন। ভিকটিম পরিবার সূত্রে জানা যায়, মামলার পর থেকে আসামিপক্ষের লোকজন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাদের হুমকি-ধমকিসহ নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। এসময় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে স্বামী-সন্তান নিয়ে বেড়াতে গিয়ে নারী পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের কথাও উল্লেখ করা হয় পর্যালোচনায়। নির্যাতন, উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানির বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনায় আসকের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০২১ সালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন ১২৮ নারী। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হন ৭৭ জন পুরুষ। এ বছর উত্ত্যক্তকরণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১২ নারী। এছাড়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিন নারী ও পাঁচ পুরুষসহ খুন হয়েছেন মোটট আটজন। ২০ এপ্রিল ভোররাতে ঢাকার সাভারে ঘরের গ্রিল ভেঙে রুমে ঢুকে প্রিয়াঙ্কা সাহা নামে এক শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে বখাটেরা। পারিবারিক নির্যাতন ও যৌতুকের বিষয় তুলে ধরে আসকের পর্যালোচনায় বলা হয়, এ বছর পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৬৪০ নারী। যার মধ্যে নির্যাতনের কারণে মারা যান ৩৭২ জন এবং আত্মহত্যা করেন ১৪২ জন। আর ২০২০ সালে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ৫৫৪ নারী। অন্যদিকে ২০২১ সালে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ২১০ নারী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যার শিকার হন ৭২ নারী এবং আত্মহত্যা করেন ১৩ নারী।
এছাড়া সালিশের মাধ্যমে নির্যাতনের বিষয় তুলে ধরে আসকের সহকারী সমন্বয়কারী অনির্বাণ সাহা বলেন, ২০২১ সালে সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে ১২ নারী নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে সালিশে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন তিন নারী এবং নির্যাতন পরবর্তী সময়ে আত্মহত্যা করেন দুই নারী। ২০২০ সালে সালিশ ও ফতোয়ার শিকার হয়েছিলেন মোট আট নারী। এছাড়া বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ও গুম, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার পরিস্থিতি, মতপ্রকাশের অধিকার, নারী অধিকার, শিশু অধিকার, শ্রমিক অধিকার রাজনৈতিক সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সীমান্তহত্যা ও নির্যাতন ও গণপিটুনিসহ বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয় পর্যালোচনায়।
লিখিত বক্তব্যে ১০টি সুপারিশ তুলে ধরে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করা, গুম, অপহরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব না করাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এসব সুপারিশ রয়েছে। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব মো. নূর খান। ২০২১ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, এ বছর মানবাধিকার পরিস্থিতি এক কথায় সহ্যক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। কোনো ঘটনারই নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার হয় না। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল, পরিচালক নীনা গোস্বামী, জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির প্রমুখ।
Leave a Reply