বিশেষ প্রতিনিধি : সাভার আওয়ামী লীগের এখন তিন তরুণের জয়জয়াকার। সস্মেলন, কমিটি গঠন, মনোনয়ন যুদ্ধ, সাংগঠনিক তৎপরতা ও কর্মসূচী পালন- সর্বত্রই তাদের সাফল্য। নবীন-প্রবীনের সমন্বয় করে চলায় তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা এখন অনেকের কাছেই ঈর্ষণীয়। সাভার আওয়ামী লীগে ‘ম্যাজিকম্যান’ খ্যাত এই তিন তরুণের নাম মঞ্জুরুল আলম রাজীব, মাসুদ চৌধুরী ও ফারুক হাসান তুহিন।
বয়সে তরুণ হলেও রাজনীতিতে তাদের রয়েছে বর্ণাঢ্যতা। বয়সে সামান্য ব্যবধান থাকলেও অনেকের কাছে তাদের পরিচয় কিং মেকার হিসেবে। ‘আস্থা বিশ্বাস ও ভরসা’- এই তিন মিলে চলছে তিনজনের টিম ওয়ার্ক। লক্ষ্যে অবিচল থাকায় প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ থাকলেও উতরে উঠছেন তারা। ওয়ার্ড-ইউনিয়ন থেকে উপজেলা ও জেলা হয়ে কেন্দ্র পর্যন্ত তারা দৌঁড়ান সমানতালে।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহলেও রাজীব-মাসুদ-তুহিন জুটি হিসেবে পরিচিত। এজেন্ডা বাস্তবায়নে ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আগা খাঁন মিন্টু এবং সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলার সঙ্গে তাদের রয়েছে নিবির যোগাযোগ, তাদের পরামর্শে ছক এঁকে কাজ ভাগ করে বাস্তবায়ন করেন তারা। বিরামহীন টিম ওয়ার্কে আসে সাফল্য। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগসহ সকল অংগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিও তাদের সমান নজর রয়েছে। অবশ্য তাদের কৌশলের কাছে হার মানা নিন্দুকেরা বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার করেও হালে পাননি।
সাভার উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের নির্বাচন আগামি ৫ জানুয়ারি। এজন্য দলের প্রার্থী নির্বাচন করতে কেন্দ্রের নির্দেশে তারা বিরামহীন সভা করেছেন। ফাইল ওয়ার্ক করে যোগ্যতার মাপকাঠি নির্বাচনে করেছেন হিসেব নিকেশ, কষেছেন অঙ্ক। এরপর তৃণমূলের মতামত নিয়ে তালিকা পাঠিয়েছেন কেন্দ্রে। তবে তাদের পছন্দের তালিকায় ১১ ইউপির মধ্যে ১০ জন বর্তমান চেয়ারম্যান ছিলেন শীর্ষে।
তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম সমরকে ফের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত করতে তারা ৫ বছরে সমরের ইতিবাচক কর্মকান্ড সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে সভা-সমাবেশে অংশ নেয়। এলাকার উন্নয়নে তার নিরচ্ছিন্ন সাফল্যের চিএ তুলে ধরেন। তাদের আশা এবং পরিশ্রমের সাফ্যল্য মিলেছে।
একইভাবে ভাকুর্তা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে ল্যাং দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লিয়াকত হোসেনের সেখানে দলীয় প্রার্থীতা নিয়ে তারা আশায় বুক বাঁধেন, চেষ্টা তদবির করেন। এতেও সফল হয়েছেন তারা।
আমিনবাজার ইউনিয়নে এবারো সাফল্য তাদের ধরা দিয়েছিল। কিন্তু ৬ ছাত্র হত্যা মামলায় আদালতের এক রায়ে পাল্টে গেছে হিসেব। কাউন্দিয়া ইউনিয়নে সবকিছু ঠিক থাকলেও আতিকুর রহমান খান শান্ত গতবার স্বতন্ত্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করায় সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে এবার তিনি পাননি নৌকার টিকেট। অবশ্য তিন তরুণ ক্যারিশমেটিক লিডার শান্তর বিকল্প হিসেবে যার নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলেন সেই মেসের আলী পেয়েছেন নৌকা প্রতীক। এটাও তারা প্রাপ্তি হিসেবে দেখছেন।
প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসেব মিললেও দলের মনোনীত প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য তারা মাঠে থাকেন। পৌরসভা নির্বাচনে সম্মিলিত চেষ্টায় ফল ঘরে তোলার ধারাবাহিকতায় ধরে রাখতে চান জয়ের ধারাবাহিকতা। ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে-পরে দলের মনোনয়ন বঞ্চিতদের ক্ষোভ নিরসনে ‘ম্যান টু ম্যান’ বৈঠক করেন তারা। এতেও যারা সাড়া দেননি তাদের জন্য কেন্দ্রের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কঠোর হুশিয়ারী, দিয়েছেন ভিডিও বার্তা। কেন্দ্রের নির্দেশ পেলেই শুরু হবে এ্যাকশন।
মঞ্জুরুল আলম রাজীব : সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার আগে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সাভার কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মঞ্জুরুল আলম রাজীব সাভার থানা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। স্কুলজীবনে ছাত্রলীগের খাতায় নাম লেখানো রাজীব মামলা, হুলিয়া নিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মাঠে থেকে হামলা ও অবর্ননীয় পুলিশী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বছরের পর বছর ফেরারী জীবন পার করেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ছাত্রদলে যোগদানের প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে তাকে পুলিশের প্রিজন ব্যানের পিছনে রশি দিয়ে বেঁধে ঘুরানো হয়। মানবাধিকার লংঘনের ওই ঘটনা বিশ্ব মিডিয়ায় স্থান পায়।
রাজ গ্রুপের চেয়ারম্যান পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। এক পুত্র সন্তানের জনক রাজীবের বড়ভাই সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জাকসু সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। তার ছোটভাই ফখরুল আলম সমর ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের চেয়ারম্যান।
মাসুদ চৌধুরী : ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ চৌধুরীর পুরো নাম আশরাফ হোসেন চৌধুরী। ছাত্রজীবনে লড়াই সংগ্রামে অংশ নেওয়া মাসুদ চৌধুরী সাভার কলেজ ও সাভার থানা ছাত্রলীগের সভাপতি, ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও সহসভাপতি এবং ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম শামসুদ্দোহা খানমজলিশের ভাগ্নে মাসুদ চৌধুরী দুই কন্যা সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ইয়াসমিন চৌধুরী সুমি সাভার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি তিনি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত। দায়িত্ব পালন করছেন সাভার পাবলিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদকের। পেশায় তিনি ঠিকাদার।
ফারুক হাসান তুহিন : আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক ফারুক হাসান তুহিন সাভার কলেজ ছাত্র সংসদের এজিএস ও জিএস নির্বাচিত হন। তিনি সাভার কলেজ ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের। ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগে নাম লেখিয়েই ঢাকা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এর ধারাবাহিকতায় আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। এরপর সরাসরি মূলদলের আশুলিয়া কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহবায়কের দায়িত্ব পান। পেশায় তিনি ঠিকাদার। তার বাবা হাজি আব্দুল গনি সাভার পৌর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে অদ্যবধি দায়িত্বে আছেন। পরপর দু’বার সাভার পৌরসভার মেয়রের দায়িত্বে আসীন। দুইপুত্র সন্তানের জনক তুহিনের স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা।
Leave a Reply