সংবাদ রিপোর্ট: ৯ বছর আগে ২০১৩ সালের এই দিনে সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৭৫ জন শ্রমিক নিহত এবং ২ হাজার ৭৬৯ জন আহত হন। দিনটিকে স্মরণ করে রোববার সকাল থেকেই ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে নিহত শ্রমিকদের জন্য নির্মিত বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, হতাহতদের স্বজনসহ সাধারণ মানুষ। এ সময় শ্রমিক নেতারা বলেন, আমরা কে টি এস স্পেকট্রাম, তাজরিন, স্মার্ট, রানা প্লাজা, আসওয়াদ, ট্যাম্পাকো, হাসেম ফুডস ট্র্যাজেডি আর দেখতে চাই না। কিন্তু শ্রমিকের মৃত্যুর মিছিল চলছেই। তারা আরও বলেন, এসব দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের স্থায়ী পুনর্বাসন, আহতদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা ও মানসিক ট্রমা থেকে মুক্ত করার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা প্রয়োজন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও পরিবার ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপূরণ পায়নি। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা ইসমাইল হোসেন ঠান্ডু বলেন, শ্রমজীবী মানুষের জীবন ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার বিষয়ে কারখানা মালিক ও শ্রমিক নিয়োগকারীদের অবহেলা, উদাসীনতা ও আইন অমান্য করার প্রবণতা, সরকারের নিয়মিত পরিদর্শন ও আইন বাস্তবায়নে দৃঢ়তার অভাব রয়েছে। শ্রম আইনে অপর্যাপ্ত এবং নামমাত্র ক্ষতিপূরণের বিধান কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর কর্মস্থল, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য, ধুলাবালি, অত্যধিক শব্দ-তাপে কাজ, কোনো সুরক্ষা ছাড়াই মাটির গভীরে কাজ করা প্রভৃতি কারণে শ্রমিক আক্রান্ত হচ্ছে জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে। তিনি বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটি ক্ষতিপূরণের পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ টাকা করার সুপারিশ করলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৬ সালে শ্রম আইনে নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ১৩ বছর পর ২০১৮ সালের শ্রম আইন সংশোধনীতে নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ ২ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কর্মস্থলের নিরাপত্তা বিধানে দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি আজও। ৯ বছর অতিক্রান্ত হলেও রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা ও বিল্ডিং কোড সংক্রান্ত আইন ভঙ্গের মামলা আজও নিষ্পত্তি হয়নি। আমরা এসব নিষ্পত্তির জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। পরে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম নামের একটি সংগঠন বেশ কিছু দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো হলো- রানা প্লাজা ও তাজরিনসহ সারাদেশের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আইএলও কনভেনশন ১২১ এবং মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন ১৮৫৫-এর ভিত্তিতে সারা জীবনের আয়ের ক্ষতির ভিত্তিতে ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় উচ্চ আদালতের আদেশে প্রদত্ত ক্ষতিপূরণের বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
Leave a Reply