1. kamruzzaman78@yahoo.com : kamruzzaman Khan : kamruzzaman Khan
  2. ssexpressit@gmail.com : savarsangbad :
শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২২ পূর্বাহ্ন

সাভারে গৃহহীনদের ঘর পেয়েছেন কোটিপতি ব্যবসায়ী ও তার দুই বোন 

  • আপডেট সময় : সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২২

সংবাদ রিপোর্ট: সাভারে গৃহহীনদের জন্য সরকারের দুর্যোগ সহনীয় ঘর বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গৃহহীনদের এসব ঘর না দিয়ে দেওয়া হয়েছে বিত্তশালীদের। সাভারে দুর্যোগ সহনীয় তিনটি ঘর বিত্তশালী একই পরিবারের লোকজনকে দেওয়া হয়েছে। অথচ সরকারি তালিকায় তাদের কোনো নাম নেই। ৩১ অক্টোবর সোমবার সাভারের আমিনবাজার ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বিনোদবাড়ি, নরসিংহপুর ও পাঁচগাছিয়া এলাকা ঘুরে জানা যায়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাবিটার আওতায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগসহনীয় ঘর বরাদ্দ থাকলেও প্রায় কোটি টাকার মালিক পেয়েছেন সেই ঘর। যা ভেঙে দোকান ও রিকশার গ্যারেজ ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সরকারি বরাদ্দের দুটি ঘর নির্মাণের পর থেকেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাবিটার আওতায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগসহনীয় ঘর নির্মাণে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আমিনবাজার ইউনিয়নে মোট ছয়টি ঘরের বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে জায়গা জটিলতার কারণে দুটি ঘরের বরাদ্দ ফেরত যায়। বাকি ঘরগুলোর দুটি সরকারি তালিকার বাইরে দেওয়া হয় কোটি টাকার মালিক ফয়জুর রহমান ফয়েজকে। যার ভেকু, সিমেন্ট, কয়লা ড্রেজার ও বালুর ব্যবসাসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। অপরটি দেওয়া হয় ফয়েজের খালাতো বোন শাহিদা আক্তার রুনাকে। তিনিও বসবাস করেন শ্বশুড়বাড়ির তিন তলা ভবনের একটি বাড়িতে। আর তার স্বামী মোরসালিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের স্টোর ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি দুটি ঘর তালিকা অনুযায়ী আয়েশা আক্তারসহ প্রতিবন্ধী শাহ আলমকে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে প্রতিবন্ধী শাহ আলম আর্থিকভাবে অসচ্ছল হলেও আয়েশা আক্তার বিত্তশালী। তিনি সরকারি ঘর পরিত্যক্ত রেখে বসবাস করছেন নানার বাড়ির তিন তলা বাড়িতে। এই আয়েশা আক্তার হলেন ফয়জুর রহমান ফয়েজের বোন। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের আমিনবাজার ইউনিয়নের কাবিটার আওতায় বরাদ্দকৃত ঘরের তালিকা প্রণয়নে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরাদ্দকৃত চারটি ঘরের তালিকা অনুযায়ী এসব ঘরের প্রকৃত মালিক হলেন- আমিনবাজারের নরসিংহপুর এলাকার আব্দুল হাকিমের মেয়ে আসমা আক্তার, একই এলাকার আব্দুল হাকিমের মেয়ে আয়েশা আক্তার, আমিনবাজারের বিনোদবাড়ি এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে রুহুল আমিন ও আমিনবাজারের ধোবাউরা এলাকার আব্দুল ওহাবের ছেলে প্রতিবন্ধী শাহ আলম। তবে প্রকৃত মালিক শাহ আলম ছাড়া বাকিদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বর্তমানে সেসব ঘরের মালিকানা নিয়ে দখলে আছেন আমিনবাজারের নরসিংহপুর এলাকার কোটি টাকার মালিক ফয়েজ, আমিনবাজারের পাঁচগাছিয়া এলাকার ফয়েজের নিজ বোন আসমা ও খালাতো বোন শাহিদা আক্তার রুনা। অন্যের সরকারি ঘর বাগিয়ে নেওয়া ফয়েজের খালাতো ভাই ও শাহিদা আক্তার রুনার আপন ভাই সাদ্দাম বলেন, এই ঘরগুলো গরিব মানুষের জন্য। আমার খালাতো ভাই ফয়েজ আমার মাকে ভুলভাল বুঝিয়ে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে আমার বোনকে এই ঘরটি এনে দেন। আমাদের তিন তলা বাড়ি আছে। আমাদের সঙ্গে এসব যায় না। এই ঘরগুলো গরিব মানুষের হক। আর্থিকভাবে অসচ্ছল স্থানীয় মো. সফর আলী বলেন, প্রকৃতপক্ষে এসব ঘর যাদের পাওয়ার কথা তারা আসলে ঘর পাননি। কোটিপতিরা এসব ঘর পেয়েছেন। আমার জমি আছে কিন্তু দুর্যোগ সহনীয় ঘর নেই। আমি মেম্বারের কাছে ঘর চাওয়ার পরও আমাকে দেননি। মেম্বার ঘর দিয়েছেন বড় লোকদের। অসদুপায়ে উপকারভোগী শাহিদা আক্তার রুনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্বামী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের স্টোর ইনচার্জ মোরসালিন বলেন, আমার খালাতো শ্যালক ফয়েজুর রহমান যোগাযোগ করে আমার স্ত্রীকে এই ঘর এনে দেয়। উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার এসে ম্যাপ করে ঘর করে দেন। আমরা ওই বরাদ্দের সঙ্গে আরও দুই লাখ টাকা দিয়ে ঘরের কাজ করাই। আমার স্ত্রীর নামে ঘর হলেও সে আমার সঙ্গেই থাকে। সরকারি ঘরটি আমরা ভাড়া দেওয়ার জন্য মনস্থির করেছিলাম। পরে ঘরের বিদ্যুতের লাইন না থাকায় আর ঘরটি ভাড়া দেওয়া হয়নি। তাই সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বিদ্যুৎ থাকলে সেটি ভাড়া দিতাম। তাহলে আর পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকতো না।

এ ব্যাপারে ফয়জুর রহমান ফয়েজ বলেন, আমি আমার দুই বোনকে দুটি ঘর এনে দিয়েছি। তাদের অবস্থা খারাপ ছিল। তাই উপজেলায় যোগাযোগ করে দুটি ঘরের ব্যবস্থা করেছিলাম। তবে সরকারি ঘর পরিত্যক্ত রেখে তার দুই বোন তিন তলা ঘরে বসবাস করার কারণ জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। ফয়েজ বলেন, অসত্যের পেছনে দৌড়ঝাঁপ না করে আমার সঙ্গে দেখা করেন। তালিকায় আসমা আক্তারের নাম থাকা ঘরটি পেয়েছেন শাহিদা আক্তার রুনা। এই প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন তৎকালীন ও বর্তমান আমিনবাজার ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার রফিকুল ইসলাম। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি প্রকল্প সভাপতি ছিলাম। কিন্তু কাকে ঘর দিয়েছে এসব আমি জানি না- এই বলেই তিনি ফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আবার যোগাযোগ করা হলে রফিকুল ইসলাম বলেন, যিনি প্রকল্পের সভাপতি তার ভোটার আইডি কার্ডতো থাকবেই। নরসিংহপুরে শাহিদা আক্তার রুনা ঘর পেয়েছেন, কিন্তু তালিকায় তার নাম নাই কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব কিছু ইউনিয়নের সচিব বলতে পারবেন। সচিবই সব কিছু করেছেন। উনিই নাম লিখেছেন। কে দিয়েছে তা তো উনিই জানেন। আমিনবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আফজাল হোসেন বলেন, কাজ হওয়ার পর যদি এ কথা বলা হয় তাহলে তিনি (মেম্বার) নার্ভাস হয়ে বলছেন। কারণ এটা তো সচিবের কাজ না। ফয়েজসহ থেকে কাজ তারাই করেছেন। তাদের কাজ তারাই করেছেন। ফয়েজ হলো আগের চেয়ারম্যানের আত্মীয়। এখানে আমার আর মেম্বারের তেমন কোনো কাজই নাই। উনারাই তদারকি করেছেন। সরকারি তালিকায় যাদের ঘর আছে তারা ঘর পাননি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন তো হওয়ার কথা না। চেয়ারম্যান যা বলেছে তাই করা হয়েছে। তৎকালীন সাভার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একরামুল ইসলাম বর্তমানে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তার কোনো উত্তর মেলেনি। তৎকালীন আমিনবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সাভারের আলোচিত ৭ শিক্ষার্থী খুনের মামলার অন্যতম আসামি। ফাঁসির দণ্ড নিয়ে কারাগারে থাকায় তার কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, এখানে যারা গৃহহীন রয়েছেন, তাদের জন্য গৃহ নির্মাণের প্রকল্প ছিল। যারা জরাজীর্ণ গৃহে বসবাস করছেন, তাদের জন্যই মূলত এই প্রকল্প। নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। ওই সময়ের নথিপত্র দেখে সরজমিনে তদন্ত করে যদি কোনো ব্যত্যয় ঘটে থাকে নিশ্চিত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যে যে বিষয়ে অনিয়ম হয়েছে সে সব বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ :