1. kamruzzaman78@yahoo.com : kamruzzaman Khan : kamruzzaman Khan
  2. ssexpressit@gmail.com : savarsangbad :
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন

সাভারে অনুদান দিয়ে ভিন্ননামে হারিছ চৌধুরীর লাশ দাফন!

  • আপডেট সময় : সোমবার, ৭ মার্চ, ২০২২

 

সংবাদ রিপোর্ট: সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপির সাবেক নেতা আবুল হারিছ চৌধুরীকে ‘মাহমুদুর রহমান’ পরিচয়ে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুরের জালালাবাদ এলাকায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন ঢাকা মাদ্রাসার কবরস্থানে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ৪ তারিখ দাফন করা হয়। তার পরিবারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিক্রিয়া না জানানোয় বিষয়টি নিয়ে এখনও ধুম্রজাল রয়েছে। তবে, সরেজমিনে খোঁজ নিতে গেলে জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন ঢাকা নামের মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আশিকুর রহমান জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ আছরের নামাজের পর ‘মাহমুদুর রহমান’ নামে একজনকে দাফন করা হয়েছে। যার মরদেহ সামিরা নামে একজন নিয়ে আসেন। সামিরা নিজেকে মৃত ব্যক্তির কন্যা হিসেবে পরিচয় দেন। ৫ লাখ টাকা অনুদানের মাধ্যমে মাদ্রাসার গোরস্থানে ‘মাহমুদুর রহমানকে’ দাফন করা হয় বলে জানান জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আশিকুর রহমান। তবে সেই ব্যক্তি হারিছ চৌধুরী কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। কবর দেওয়ার সময় পর্যন্ত তার নাম মাহমুদুর রহমান বলেই জানানো হয়েছিল। এমনকি কবর দেওয়ার সময় সেখানে থাকা মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললেও তারা একই কথা জানান।

জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন ঢাকা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আশিকুর রহমান কাশেমী আরও জানান, গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বরের আগেদিন রাতে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে তারা প্রবাসী বলে দাবি করেন। তাদের কোনও আত্মীয়-স্বজন দেশে নেই, সবাই প্রবাসী, সে কারণেই সন্তানেরা ঢাকাতে দাফন করতে চায়। পরে ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে তিনি নিজেই মাদ্রাসায় জানাজার নামাজ শেষ করে আঙিনায় কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করেন। মাদ্রাসার আহসানউল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে একদিন বিকালের দিকে ঢাকা থেকে মাহমুদুর রহমান নামের একজনের মরদেহ নিয়ে আসা হয়। পরে তাদের মাদ্রাসার প্রায় সাড়ে তিনশত শিক্ষার্থী ও বহিরাগত আরও একশ লোক এই জানাজায় অংশগ্রহণ করে।’

মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে মাদ্রসার নিয়ম অনুযায়ী ছদকায়ে জারিয়া (অনুদান) যারা দেয় তাদের জন্য একটা সারিতে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ‘মাহমুদুর রহমানের’ পরিবারও কবরের জন্য পাঁচ লাখ টাকা দান করে এখানে কবর দেয়।’ তাদের এখানে কবর দেওয়া যায় বা এই নিয়মে কবর দেওয়া হয়, সেটি মাহমুদুর রহমানের পরিবার কীভাবে জানলো বিষয়টি তার জানা নেই, বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি আরও জানান, ৪ সেপ্টেম্বর ‘মাহমুদুর রহমানের’ মেয়ে সামিরা চৌধুরী এসে বলেন, তার বাবার মৃতদেহ এখানে দাফন করতে চান। পরের দিন মাগরিবের আগ মুহূর্তে জানাজা দেওয়া হয়। নিহতের পরিবারের ৪/৫ জন সদস্য দাফনের সময় মাদ্রাসায় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও আশপাশের লোকজন জানাজায় অংশগ্রহণ করে’ বলে তিনি জানান। তবে তিনিই হারিছ চৌধুরী কিনা বা সে সময় পরিচয় গোপন করে মৃতদেহ দাফনের বিষয়টি নিয়ে তাদের কোনও সন্দেহ দেখা যায়নি বলে উল্লেখ করেন মাদ্রাসা শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘একটু তাড়াহুড়ো ছিল তাদের। রাত হয়ে যাচ্ছে বলে রাতের আগেই কবর দিয়ে দিতে বলেন পরিবারের সদস্যরা। এছাড়াও এখানে শুধু জানাজা আর কবর দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও মারা যাওয়ার দুই সপ্তাহ পরে তার দুই থেকে তিন আত্মীয় কবর দেখতে এসেছিলেন। তবে গত এক বছরের মধ্যে আর কেউ আসেনি বলে তিনি জানান। হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন নাকি মারা যাননি; এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও তৈরি হয়েছে নানা কৌতূহল। এবার এই আলোচনায় অনুসন্ধানী তথ্য এনে হাজির করেছে একটি জাতীয় দৈনিক। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, আত্মগোপনে থেকে হারিছ চৌধুরী ঢাকায় মারা গেছেন। তবে ভিন্ন পরিচয় ও নামে।

গত ১৫ জানুয়ারি বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, হারিছ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মারা গেছেন। হারিছের বিলেত প্রবাসী মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা চৌধুরী এটা নিশ্চিত করেন। বলেন, তার বাবা হারিছ চৌধুরী গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা গেছেন।

এক-এগারোর পালাবদলে দেশ ছাড়েন হারিছ চৌধুরী। তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ, এম, এস, কিবরিয়া হত্যা ও বিস্ফোরক মামলারও আসামি ছিলেন তিনি। কিন্তু ১৪ বছর কোন হদিস ছিলো না তাঁর। গোয়েন্দা সংস্থাও হন্যে হয়ে খুঁজেছেন তাকে। ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মী বা আত্মীয়-স্বজন কেউ তাঁর ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি। জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী দীর্ঘ ১৪ বছর গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। দেশেই মাহমুদুর রহমান নামে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। সেই মাহমুদুর রহমানেই মারা গেছেন। হারিছ চৌধুরী ওয়ান ইলেভেনের পরপরই কিছুদিন সিলেটে অবস্থান করেন। এরপর ঢাকায় আসেন। ঢাকায় তিনি নাম বদল করেন। পরিচয় দিতেন একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হিসেবে। ঢাকার পান্থপথে প্রায় ১১ বছর কাটিয়ে দেন এই পরিচয়ে। তিনি মাহমুদুর রহমান নামে একটি পাসপোর্টও নেন। পাসপোর্ট নম্বর ইড০৯৫২৯৮২। এতে ঠিকানা দেন শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার। বাবার নাম আবদুল হাফিজ। ২০১৮ সনের ৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে এই পাসপোর্ট ইস্যু হয়। পাসপোর্টে দেয়া ছবিতে দেখা যায় এ সময় তার চেহারায় এসেছে অনেক পরিবর্তন। সাদা লম্বা দাড়ি। চুলের রঙ একদম সাদা। বয়সের ছাপ পরেছে। শুধু পাসপোর্ট নয় জাতীয় পরিচয় পত্রও পেয়ে যান মাহমুদুর রহমান নামে। তার এনআইডি নম্বর হচ্ছে ১৯৫৮৩৩৯৫০৭।

ঢাকায় যেভাবে ছিলেন হারিছ চৌধুরী: ঢাকার পান্থপথে একটি ভাড়া করা এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে থাকতেন। বাসা থেকে খুব একটা বের হতেন না। একজন কাজের বুয়া ও একটি ছেলে থাকতো তার সঙ্গে। বই পড়ে সময় কাটাতেন। নামাজ আদায় করতেন নিয়মিত। নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এই এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেছেন, আমি তিন বছর ধরে এখানে কাজ করি। তার সম্পর্কে ব্যক্তিগত তথ্য খুব একটা জানতাম না। শুনেছি তার স্ত্রী ও সন্তানরা থাকেন লন্ডনে। তাকে সবাই প্রফেসর সাহেব বলেই জানতো।

সাইফুল জানান, একদিন ভোর রাতে কেউ একজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। শুনেছি হাসপাতালে থাকার পর তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর তার মেয়েকে দেখি। প্রথমে আমাদেরকে জানাতেও চাননি স্যার মারা গেছেন। মারা যাবার পর দুই মাস এই বাড়িতেই ছিলেন জামাইসহ। গত জানুয়ারিতে তারা বাসা ছেড়ে দেন। হারিছ চৌধুরী খুব একটা বের হতেন না। কথাও বলতেন না। এই বাসার সামনের একটি ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনতেন।

সেই ফার্মেসী সূত্রে জানা যায়, তিনি উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিক ও হৃদরোগের ওষুধ কিনতেন। ফার্মেসীর মালিক সুমন খন্দকার বলেন, স্যার খুব ভাল মানুষ ছিলেন। কখনো বাকিতে ওষুধ নিতেন না। পাশেই একটি মুদি দোকান। এই দোকান থেকেই জিনিষপত্র কিনতেন।মারা যাওয়া করোনা আক্রান্ত হলে হারিছ চৌধুরী মাহমুদুর রহমান নামেই হাসপাতালে ভর্তি হন। দাফনও হয় এই নামে। গত বছর ২৬ আগস্ট করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। মারা যান ৩ সেপ্টেম্বর। ডেথ সার্টিফিকেটে বলা হয়েছে তিনি মারা গেছেন। তিনি প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহবুব নূরের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যু সনদ ইস্যু করেন সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আ, ক, ম, নূর। তার মৃতদেহ গ্রহণ করেন মেয়ে সামিরা চৌধুরী। এরপর একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে গোসলের জন্য মোহাম্মদপুর নিয়ে যান। কাফনের কাপড় কেনেন মোহাম্মদপুরের মাইকআউস স্টোর থেকে। দাফনের বিষয়ে সামিরা চৌধুরী বলেন, আত্মীয়স্বজনের পরামর্শে বাবাকে সাভারে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়। লাশ নিয়ে যাওয়া হয় সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের জালালাবাদ কমলাপুরে। তাকে জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন ঢাকা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণেই দাফন করা হয়। বাবা গোপনীয়তা সম্পর্কে সামিরা চৌধুরী বলেন, ১৪ বছর যে মানুষটি আত্মগোপনে ছিলেন তার খবর প্রকাশ করা সহজ ছিল না। নানা ভয় আর আতঙ্ক কাজ করেছে। তবে এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি অধ্যাপক মাহমুদুর রহমানই আমার বাবা হারিছ চৌধুরী। ডিএনএ টেস্ট করলেই এটা খোলাসা হয়ে যাবে। জীবিত থাকা অবস্থায় আমি লন্ডন থেকে টেলিফোনে উনার সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। সুইজারল্যান্ডে অবস্থানরত আমার ভাই নায়েম শাফি চৌধুরীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।

মৃত্যু ও দাফন নিশ্চিত হতে তদন্ত করবে পুলিশ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, এ বছরের শুরুতে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে— এমন খবর নিশ্চিত হতে সিআইডিকে চিঠি দেয় ইন্টারপোল। ওই চিঠির পর তদন্ত করে সিআইডি। মৃত্যু তথ্য নিশ্চিত হতে পারার বিষয়টি জানিয়ে সদর দফতরকে অবহিত করে সংশ্লিষ্টরা। এখন আবারও নতুন করে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু ও তার দাফনের বিষয়টি সামনে আসায় নতুন করে খোঁজ খবর নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সূত্রের দাবি, সাভারে দাফন হওয়া ‘মাহমুদুর রহমান’ই হারিছ চৌধুরী কিনা, তা নিশ্চিত হতে আইনি প্রক্রিয়ায় আগাবে পুলিশ। এক্ষেত্রে তার মরদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ টেস্ট করার প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে পারে তারা। আদালতের নির্দেশনা পেলে দ্রুতই এ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র। জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান বলেন, ‘এই বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলার অভিযুক্ত আসামি ছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রভাবশালী নেতা সিলেটের হারিছ চৌধুরী। ওই হামলার টার্গেট ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই হামলা মামলার চার্জশিটেও অভিযুক্ত আসামি ছিলেন হারিছ চৌধুরী। অভিযোগপত্রে তাকে লাপাত্তা দেখানো হয়। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর হারিছ চৌধুরী গা ঢাকা দেন। ২১ আগস্ট হামলা মামলায় তিনি অভিযুক্ত হওয়ার পর ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হয়। ইন্টারপোলের রেড নোটিশে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, ‘খুন এবং আওয়ামী লীগের সমাবেশে হ্যান্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ।’ ৬ মার্চ রবিবার ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটের রেড নোটিশে তার ছবিসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্যও উল্লেখ রয়েছে। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনও তথ্য আপাতত নেই। তদন্ত করা হলে জানা যেতে পারে। আর রেড নোটিশের বিষয়টি আমার জানা নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ :