সংবাদ রিপোর্ট : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দলটির সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং মুরাদ এবং আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগ করা ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা তাদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বার্ষিক আয় ও সম্পদের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছেন সাইফুল ইসলাম এবং পিছিয়ে রয়েছেন প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। আসনটিতে মূলত এই তিন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করছেন ভোটাররা। হলফনামায় সাইফুল ইসলাম তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৯২ টাকা। কৃষি, ভাড়া, ব্যবসা, জমি ক্রয়-বিক্রয় ও ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে এই আয় করেছেন তিনি। এনামুর রহমানের এফডিআর ও ব্যাংক সুদ, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সম্মানী ভাতা থেকে বার্ষিক মোট আয় ৩৭ লাখ ৮৯ হাজার ৩৪৫ টাকা। সাবেক সংসদ সদস্য মুরাদ জংয়ের বাড়ি ভাড়া, ব্যবসা, এফডিআর ও অন্যান্য খাত থেকে বার্ষিক আয় ১ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ২৪৬ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন সাইফুল ইসলাম। তার নগদ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা, শেয়ার, গাড়ি, স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকসামগ্রী, অগ্রিম জামানত ও ব্যবসায় বিনিয়োগে মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৭ কোটি ১৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬১ টাকা। বিপরীতে ডা. এনামুর রহমানের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৮ কোটি ২৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩৪৭ টাকা। মুরাদ জংয়ের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৭ কোটি ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯১ টাকা। স্থাবর সম্পদেও তিন প্রার্থীর মধ্যে এগিয়ে আছেন সাইফুল ইসলাম। তার মোট ২৪ কোটি ১৯ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৭ টাকা মূল্যের ৬৫৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ অকৃষি জমি, তিনটি আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, ফ্ল্যাট ও একটি মৎস্য খামার আছে। মুরাদ জংয়ের রয়েছে মোট ৭ কোটি ৫৮ লাখ ৩৮ হাজার ৭২৯ টাকা মূল্যের ৪০ বিঘা কৃষিজমি, ১৫ কাঠা অকৃষি জমি, মার্কেট ও দুটি কারখানা শেড ও সাতটি ফ্ল্যাট। প্রতিমন্ত্রী এনাম স্থাবর সম্পদ হিসেবে পূর্বাচলে তিন কাঠা জমির অর্জনমূল্য দেখিয়েছেন ৬ লাখ টাকা। হলফনামা অনুযায়ী, ঋণের দিক দিয়ে প্রতিমন্ত্রী এনাম এগিয়ে রয়েছেন। কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে তার ব্যাংকঋণের পরিমাণ ৮৭ কোটি ৭২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। সাইফুল ইসলামের ব্যাংকঋণ রয়েছে মোট ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৫২ হাজার ৩৯০ টাকা। এ ছাড়া মুরাদের তিনটি কারখানা ও দুটি মার্কেটের অগ্রিম ভাড়া বাবদ মোট ৫০ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬২ টাকা।
তিন প্রার্থীর মধ্যে স্ত্রীর সম্পদের দিক থেকে এগিয়ে সাইফুল ইসলাম, পিছিয়ে ডা. এনামুর রহমান। সাইফুল ইসলামের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৯৮ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে স্বর্ণ, ব্যাংকে জমা টাকা, ইলেকট্রনিকসামগ্রী, আসবাবপত্র ও অগ্রিম জামানত। তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৮৯ লাখ ৪২ হাজার ১৩ টাকা। এর বাইরেও উপহার হিসেবে পাওয়া ৮৪ দশমিক ২৫ শতাংশ কৃষি ও অকৃষি জমি এবং একটি কোম্পানির ৪০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। তবে হলফনামায় এসবের মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। আর মুরাদ জংয়ের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৯৭ লাখ ১ হাজার ৫৩২ টাকা এবং ৫৯ লাখ ৪০ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যের চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
এদিকে নিজ নামে বা স্ত্রীর নামে বাড়ি নেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান এমপি ডা. মো. এনামুর রহমানের। চিকিৎসা পেশা থেকেও আয় বন্ধ হয়ে গেছে এই সংসদ সদস্যের। এনামুর রহমানের স্ত্রীর কোনো সম্পদ নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসিতে ডা. মো. এনামুর রহমানের পক্ষে জমা দেয়া হলফনামা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে চিকিৎসা পেশা থেকে তিনি আয় করতেন বছরে ৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, যা বর্তমানে নেই। আর ওই সময়ে তার স্ত্রী চিকিৎসা পেশা থেকে আয় করতেন ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, তাও এখন নেই। হলফনামায় দেয়া হিসেব অনুযায়ী, কোম্পানির পরিচালক হিসেবে ডা. এনামুর রহমানের চেয়ে স্ত্রীর আয় বেশি। পরিচালক হিসেবে ডা. এনামুর রহমান বছরের পান ৩ লাখ ৭০ হাজার, তার স্ত্রী পান ১২ লাখ ৮৯ হাজার। পরিতোষিক ভাতা হিসেবে তিনি পান ১ লাখ ৮০ হাজার ও স্ত্রী পান ৭ লাখ ৩৬ হাজার। ব্যাংকে এফডিআর হিসেবে নিজ নামে রয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
২০১৩ সালের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, এই এমপির নিজ নামে নগদ টাকা ছিল ২ কোটি ৮০ লাখ ৪৯ হাজার ৯২ টাকা, আর স্ত্রীর কাছে ছিল ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বর্তমানে নগদ টাকা রয়েছে নিজ নামে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৪২ হাজার ৭৭৫ টাকা ও স্ত্রীর কাছে নগদ টাকা রয়েছে ১৮ কোটি ৮ লাখ ২৯ হাজার ২৪৯ টাকা। ডা. এনামের নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে বাড়ি, ফ্ল্যাট না থাকলেও ভাড়া বাবদ স্ত্রীর আয় ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৭ টাকা! কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের দায় ৫৮ কোটি ৩০ লাখ ৭৮ হাজার ৯৭০ টাকা আর স্ত্রীর নামে দায় রয়েছে ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ২৪৮ টাকা।
Leave a Reply