1. kamruzzaman78@yahoo.com : kamruzzaman Khan : kamruzzaman Khan
  2. ssexpressit@gmail.com : savarsangbad :
বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:১৯ পূর্বাহ্ন

ভোটগ্রহণ শেষে বুথ থেকে ফলাফল আসছে

  • আপডেট সময় : বুধবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২২

বিশেষ প্রতিনিধি: সাভারের ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রায় সব ইউনিয়নেই টুকিটাকি অনিয়মের অভিযোগের মধ্যদিয়ে ভোটগ্রহণ শেষ উঠেছে। সকাল আটিটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহন শেষে শুরু হয় গণনা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা টেনশনে চুপ মেরে যান। কর্মী-সমর্থকদের সাথে নিয়ে অবস্থান নেয় কেন্দ্রের পাশে। কেন্দ্রের ভেতর থেকে ক্ষনে ক্ষনে আসা বার্তায় অনেকে উচ্ছাস দেখান আবার অনেকের মুখ ফিকে হয়ে যায়। ফলাফল মেলাতে কেন্দ্র ভিত্তিক যোগবিয়োগ শুরু হয়েছে। কোন কেন্দ্রে কে এগিয়ে কে পিছিয়ে সেই হিসাব মেলাতে ব্যস্ত কয়েক হাজার মানুষ। অনকে এসেছেন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় অধর চন্দ্র স্কুল এলাকায়।

৫ জানুয়ারি বুধবার সকালে অধর চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থপিত রিটার্নিং অফিসারের অফিস থেকে সবকটি ইউনিয়নে কড়া প্রহড়ায় ব্যালট পেপার পাঠানো হয়। শুরুর কয়েক ঘন্টা পরই বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ঘটে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা। এর মধ্যে জাল ভোট প্রদান এবং অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আশুলিয়া ইউনিয়নে ভোট বর্জন করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রাথী। জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে বাতিল হয়েছে ১৫০টি ভোট। বন্ধ ছিল ভোট গ্রহণ। কাউন্দিয়া ইউনিয়নে ভোট হয়েছে ইভিএম পদ্ধতিতে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহন চলে। এরপরই শুরু হয় গননা। তবে সবকিছুর পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি টহল দিয়েছে, ছিল স্ট্রাইকিং ফোর্স।

এদিকে সিনিয়র নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বুধবার দুপুরে আশুলিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আশুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, কোথাও কোন লোকজন নেই। প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে সিল মারছে, সাক্ষী আছেন, সাংবাদিকরা দেখেছেন। অথচ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই। পুলিশ আছে, র‌্যাব আছে কেউ কিছু বলেনি। কি নির্বাচন করছি আমরা? নির্বাচনে অনিয়মের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি। উনিই এখানে কমিশন। উনি যেটা ভালো বোঝেন, সেভাবে ব্যবস্থা নেবেন।’

জানা গেছে, সকাল আটটার অল্প কিছুক্ষণ পূর্বে ভাকুর্তার ৭০ নং শ্যামলাসী কলাতিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পৌছে ব্যালট পেপার। এরমধ্যে সেখানে পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ৫টি বুথে দলে দলে ঢুকে পড়েন ভোটাররা। প্রতিটি বুথে ছিল দুটি করে গোপন কক্ষ। তবে দইি ঘন্টা পরই লাইন শেষ হয়ে যায়। অলস সময় কাটান পোলিং অফিসাররা। প্রিসাইডিং অফিসার নাজমুল আলম খান দুপুরে জানান, এই কেন্দ্রের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোটের পুরো আমেজ নেই। সেখানে মোট ভোটার ১৯’শ ২৩ জন। এরপাশের মহিলা কেন্দ্রে দুপুর সাড়ে বারটার মধ্যে ভোট পড়েছে এক হাজারের অধিক। মোট ভোটার ১৮’শ ১২ জন। ভাকুর্তা মডেল একাডেমী কেন্দ্রে দুপুরে ছিল নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। প্রিসাইডিং অফিসার আতিকুর রহমান বাপ্পী জানালেন, সেখানে কোনো অনিয়মের অভিযোগ নেই। সাড়ে এগারটার মধ্যে ৫ বুথে ভোট পড়েছে প্রায় ৪’শ। বনগাঁও ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইকরা এডুকেশন হোম নারী ভোট কেন্দ্রে সকালে অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও পরে তা শান্ত হয়। কিন্তু দুপুরের পর ফের নৌকা প্রতীকে সিল মারার অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ১৯’শ ৯ জন ভোটেরর ওই কেন্দ্রে ৬টি বুথে এগারটা পর্যন্ত প্রায় ৬’শ ভোট গ্রহনের কথা জানান প্রিসাইডিং অফিসার ইয়াসিন আলী। একই ইউনিয়নের কোন্ডা ইসলামিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৬টি বুথে নারী-পুরুষ মিলে ভোটার ভোটার ২ হাজার ৫৬ জন। প্রিসাইডিং অফিসার প্রকাশ চন্দ্র সরকার জানান, শান্তিপূর্ন ভোট হয়েছে সেখানে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ভোট হয়েছে সুষ্ঠভাবে। উম্মুল মুমেনীন খাদিজাতুল কোবরা মাদ্রসা কেন্দ্রে ২ হাজার ৪৭ জন ভোটার। ৫টি বুথে সাড়ে এগারটা পর্যন্ত ৮০০ জন ভোট দিয়েছেন বলে প্রিসাইডিং অফিসার বদরুল আলম নিশ্চিত করেছেন। তেঁতুলঝোড়া এএন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর লড়াই হয়। সেখানে বিচ্ছিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠে দুপুরে। বিরুলিয়া ইউনিয়নের ২৪ নং কাকাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৫০ টি ভোট নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দলবল নিয়ে সিল মারার কারনে বাতিল করেছেন নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট। বনগাঁও ইউনিয়নের ৬ এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক কেন্দ্রে কারচুপির অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেন। আশুলিয়ার একাধিক ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ভোট বর্জন করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। আমিনবাজারের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে জাল ভোটের অভিযোগ উঠেছে। শিমুলিয়া ইউনিয়নের গাজিবাড়ি এবং নাল্লাপোল্লা কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম, কুরগাওসহ কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকায় ব্যাপক জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজে জাল ভোট দিতে গিয়ে আটক হয়েছেন একজন। পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম, কুরগাওসহ কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকায় ব্যাপক জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ। আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকা আতঙ্কে ভোটারশূন্য। সাভার সদর ইউনিয়নের ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দেওগাঁও নিউ মডেল হাইস্কুল, দেওগাঁও কিন্ডার গার্টেন ও কলমা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের পক্ষে জাল ভোট দেয়ার অুিভযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এডভোকেট আব্দুল আওয়াল। ভোটগ্রহণ শেষের পাঁচ মিনিট আগে তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। আশুলিয়ায় প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারার অভিযোগে কেন্দ্র্র বন্ধের দাবি জানান স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ভোটাররা। সাধারণ সদস্য পদেও সিল মারার অভিযোগ উঠেছে। এতে চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থী ওই কেন্দ্রের ভোট বন্ধের দাবি জানান। আশুলিয়া ইউনিয়নের আশুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরুষ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কেন্দ্রটিতে ব্যাপক হট্টগোল বাঁধে। এরপর থেকে আতঙ্কে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কমে যায়। চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হেলাল উদ্দিন মাদবর অভিযোগ করেন, ভেতরে পুলিশের এসআইর নেতৃত্বে নৌকায় ভোট দিয়েছে লোকজন। আমরা এখানে ভোট বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। একই কেন্দ্রে ইউপি সদস্য পদে ফুটবল মার্কায় মো. হেলাল বেপারীর পক্ষে জোরপূর্বক সিল মারার অভিযোগ তুলেন প্রতিদ্বন্দ্বী আপেল মার্কার প্রার্থী মশিউর রহমান। তিনি পুনরায় ভোটের দাবি জানিয়ে ভোটগ্রহণ বন্ধের দাবি জানান। এ বিষয়ে কেন্দ্রেরর দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজুর রহমান বলেন, কে কি বললো দেখার বিষয় না। আমার দায়িত্ব আমি পালন করছি। নৌকা প্রতীকে সিল মারার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা অসম্ভব’। এ ঘটনার পর কেন্দ্রটি পরিদর্শনে আসেন ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি দেখছি। ভোট সুষ্ঠু করাটাই এখন প্রধান কাজ। সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ৫ম ধাপে সাভারের ১১টি ইউনিয়ননে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুটি ইউনিয়ন বাদে ১০টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৫২ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ১১৭ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৫৭ জনসহ সর্বমোট ৫২৬ জন। এর মধ্যে তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত আসনে একজন ও সাধারণ সদস্য পদে সাতজন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে আওয়ামী লীগের ১১ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৯ জন, জাতীয় পার্টির ২ জন, জাকের পার্টি ২ জন ও স্বতন্ত্র ১৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বদন্দ্বিতা করেন। সাভারে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১২ হাজার ৩১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৭ হাজার ৬৮৯ জন ও মহিলা ভোটার ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬২৫ জন।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ :