সংবাদ রিপোর্ট : ধামরাইয়ে টানটান উত্তেজনা ও উত্তাপের মধ্যেই ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোনো অপ্রিতীকর ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতা এবং নিরপেক্ষতায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েন। এরমধ্যে ৭টিতে শোচনীয়ভাবে হেরেছে নৌকার প্রার্থীরা। যাতে দলের ছয়জন বিদ্রোহী এবং একজন বিএনপি সমর্থক প্রার্থী জয় পেয়েছেন। মেম্বার পদে বাদ পড়েছেন পুরানো অনেকে।
১১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর নির্বাচনে ফলাফল প্রকাশ পেলে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা থমকে যান। আলোচনায় আসে বর্তমান সংসদ সদস্য, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ ও সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেকের বিরোধের চিত্র। বিএনপি সরাসরি নির্বাচনে না আসার পরও প্রার্থী নির্বাচনে ভুল এবং দলীয় কোন্দলকে এই ফলাফল বিপর্জয়ের কারণ হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষরা। ভোটের গড় হিসাবে ফলাফল এমন দাঁড়িয়েছে যে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অনেক ইউনিয়নে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন! আবার যেসব ইউপিতে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন সেখানে লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। প্রায় সব ইউনিয়নে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি ছিল স্পষ্ট।
প্রাপ্ত ফলাফল মতে, ধামরাই সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মশিউর রহমান, কুল্লায় বিদ্রোহী লুৎফর রহমান, বাইশাকান্দায় আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান, কুশুরায় আওয়ামী লীগের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান, সানোড়ায় আওয়ামী লীগের খালেদ মাসুদ লাল্টু, সোমভাগে বিদ্রোহী আওলাদ হোসেন, চৌহাটে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী পারভীন আক্তার প্রিতী, আমতায় আওয়ামী লীগের আরিফ হোসেন, যাদবপুরে বিদ্রোহী মিজানুর রহমান মিজু, ভাড়াড়িয়ায় বিদ্রোহী মুসলিম উদ্দিম মাসুম, গাংগুটিয়ায় আওয়ামী লীগের আব্দুল কাদের মোল্যা, বালিয়ায় আওয়ামী লীগের মজিবর রহমান, সোয়াপুরে আওয়ামী লীগের বীর মুক্তিযোদ্ধা কফিল উদ্দিন, রোয়াইলে আওয়ামী লীগের বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন ও নান্নারে বিদ্রোহী আলতাফ হোসেন বিজয়ী হয়েছেন। রোয়াইল ও সোয়াপুর ইউনিয়নে সদ্য সাবেক দুই চেয়াম্যান প্রতিদ্বন্দ্বীতার মাঠ থেকে শেষ মুহুর্তে সড়ে দাঁড়ানোয় ভোটের পর তারা মুষড়ে পড়েছেন। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বসেছেন হিসাব মেলাতে। শেষ মুহুর্তে সড়ে দাঁড়ানোয় জয়ের কাছ থেকে ছিটকে পড়েছেন তারা এমন হিসাবে মেলাতে ব্যস্ত অনেকে। অবশ্য সুতিপাড়া ইউনিয়নের নির্বাচন আইনী জটিলতা শেষ হলেও ঝুলে আছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দু’একটি কেন্দ্র ছাড়া ধামরাইয়ের ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়া ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশ করার অভিযোগে আটক হয়েছে ৩ জন। জাল ভোট দেয়া নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে সুয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদে। ১১ নভেম্বর বৃহষ্পতিবার ভোটের দিন ধামরাইয়ের কুশুরা ইউনিয়নের টেপের বাড়ি হামিদা আফাজ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে সনকাল ১০ টার দিকে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুজ্জামানের ভাতিজা আলাল নিজেই ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ফেলছেন। সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে ধামরাই উপজেলার কুশুরা ইউনিয়নের হামিদা আফাজ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, টোপের বাড়ি ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বড় ভাইয়ের ছেলে মো. আলাল ও মেজ ভাইয়ের ছেলে রবিউল করিম রুবেল উপস্থিত হন। অভিযোগ উঠেছে, এর মধ্যে আলালই সিল মেরে দেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. নুরুজ্জামানের নৌকা প্রতীকে। এরপর নিজেই ব্যালট বাক্সে ফেলছেন সিল মারা ব্যালট পেপার। ভোটাররা কক্ষে প্রবেশ করে ব্যালট পেপার নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাছে চলে যাচ্ছেন আলাল। সিল নিয়ে নৌকা প্রতীকে নিজেই সিল মারছেন। এরপর ব্যালট বাক্সে ফেলে দিচ্ছেন। তবে ভোটাররা ইউপি সদস্য পদের প্রার্থীদের ভোট নিজেরাই দিচ্ছেন। ওই এলাকার ভোটার সািবর উদ্দিন জানান, তার ব্যালটে নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছেন আলাল। ইউপি সদস্যদের ভোট তিনি নিজে দিয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুজ্জামান বিষয়টি অস্বীকার করলেও আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী সৈয়দ বেনজীর আহমেদ বলেন, এ কেন্দ্রটিতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সমগ্র নির্বাচনের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে। প্রশাসনের কাছে দাবি, এ কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত রাখা হোক। সকালেই আমি বিষয়টি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলাম। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আমাকে জানিয়েছিলেন। অবশ্য হামিদা আফাজ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, টোপের বাড়ি ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের কোনো কিছু আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি, কেউ অভিযোগও করেনি। এ ধরনের কিছু হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুল্লায় অনিয়ম-হামলা : কুল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর কেন্দ্র থেকে দুই যুবককে আটক করা হয়। সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট মো.আবু রিয়াদ জানান, অবৈধভাবে ভোট কেন্দ্র এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশ করায় তাদের আটক করা হয়েছে। তবে ভোট গ্রহন এবং গননা শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর কুল্লা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার পদে তালা প্রতীকে বিজয়ী উজ্জল মেম্বারের ফুডনগরের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে পরাজিত মেম্বার প্রার্থী মনির হোসেন আপন। উজ্জলের অভিযোগ, আপন, শরিফুল ইসলাম, পারভেজ, বাবু ও সুমনের নেতৃত্বে ফোডনগর চন্দ্রবানু একাডেমী স্কুল কেন্দ্রের পাশে তার এবং তার শ্বশুড়বাড়িতে হামলা হয়েছে। এসময় শাওন, শাকিলসহ বেশ কয়েকজন আহত এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, হামলার সময় থানায় বারবার যোগাযোগ করেও পুলিশের সহায়তা পাওয়া যায়নি।
আমতা ইউনিয়নের হরলাল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের সহযোগীতার কথা বলে কর্মরত এক ভিডিপি নারী নিজেই ব্যালটে সিল মারতে দেখা গেছে। এ সময় তার নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি স্থান ত্যাগ করেন। ধামরাইয়ের সুয়াপুর ইউনিয়নের সদর কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে ইউপি সদস্যদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মাহী আক্তার নামে এক অপ্রাপ্ত বয়স্কা মেয়েকে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে আটক করা হয়।
Leave a Reply