ধামরাই প্রতিনিধি : কয়লা বানাতে পোড়ানো হচ্ছে শত শত ফলজ ও বনজ গাছ। এক-দুটি নয় একাধারে ১৫টি চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে এসব গাছ। তাও আবার প্রকাশ্যে চলছে অবৈধ এ অপকর্ম। কয়লা তৈরির এমন অবৈধ কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে ঢাকার ধামরাইয়ের বালিয়া ইউনিয়নের টেটাইল গ্রামে। দীর্ঘদিন যাবত আবাসিক এলাকায় এমন কারখানা গড়ে উঠলেও জানা নেই প্রশাসনের। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মাটির ঢিপি মতো দেখতে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে চুল্লি। যার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গাছের গুঁড়ি। যেগুলো চুল্লির ভেতরে দেওয়া হচ্ছে। চুল্লির চারপাশে ছিদ্র থাকায় তা দিয়ে বের হচ্ছে ধোঁয়া। যা মানব দেহসহ পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। কাঠ পোড়ানো কাজে নিয়োজিত বজলু মিয়া বলেন, চুল্লির ভিতরে কাঠ দেওয়ার পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একটা সময় আগুন বন্ধ করে বের করে আনা হয় কয়লা। দিনের চেয়ে রাতেই কাজ করা হয় বেশি। রাতে আগুন দিলে ধোঁয়া দূর থেকে দেখা যায় না। তাই কাজগুলো রাতে হয়। তবে টার্গেট বেশি থাকলে দিনেও কাজ করানো হয়। কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে স্থানীয় স্কুলশিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, এলাকাটিতে যা শুরু হয়েছে তাতে টিকে থাকা কষ্টের। ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় চারপাশ, নষ্ট হয় ফসলি জমি আর মানব জীবনে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, এলার্জি, চর্ম রোগসহ নানা সমস্যা। কেউ যেন দেখার নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৫টি চুল্লির মধ্যে ১০টির মালিক স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নাহিদ রানা আর বাকি পাঁচটির মালিক স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবেই পরিচিত নুরুল ইসলাম। তারাই প্রশাসনকে ব্যবস্থা করে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ এ ব্যবসা। এ ব্যবসার বিষয়ে জানতে চাইলে চুল্লির মালিক নুরুল ইসলাম বলেন, এগুলো সবাই জানে। প্রশাসনের কাছ থেকেই মৌখিক অনুমতি নেওয়া। খুব বেশি ক্ষতির কারণ হলে প্রশাসন একদিনও তা চালাতে দিতো না। আরেক চুল্লির মালিক নাহিদ রানা বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি হইলে হইবো। অবৈধ ব্যবসায় লিখিত অনুমতি কেউ দেয় না। অভিযোগ করলে প্রশাসন ভাইঙ্গা ফালাইবো এর চেয়ে বেশি কিছু না।’ এদিকে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করার বিষয়ে জানেন না ধামরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী। তিনি বলেন, এমন ঘটনাটি জানা নেই। কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির কোনো অনুমতিও কাউকে দেওয়া হয়নি। দ্রুতই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
Leave a Reply