সংবাদ ডেস্ক: সাভারে সরকারী খাল ও কৃষি জমি রক্ষায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেও প্রতিকার মিলছেনা বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা। গত মার্চ মাসের বিশ তারিখে সাভারের উত্তর কাউন্দিয়া মৌজার আর.এস ৬১৮৩ নং দাগের সরু খাল থেকে মাটির কাটা বন্ধের জন্য অভিযোগ প্রদানের প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে গড়িমসি করার অভিযোগ উঠেছে।লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী সরেজমিনে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সালেহপুর ব্রীজের পুর্বপাশে অবস্থিত উত্তর কাউন্দিয়া মৌজায় কৃষি জমি ও খাল থেকে অন্তত দশটি এক্সাভেটর (ভেকু) দিয়ে দেদারছে মাটি কাটছেন মাটি দস্যুরা। কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মাটি কেটে অন্তত ৫০টি ড্রাম ট্রাকে করে বিভিন্ন ইটভাটায় সেসব মাটি বিক্রী করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে মাটি কাটা লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, খোদ আমিনবাজার ইউনিয়নের রকিব চেয়ারম্যান ওই মাটিখেকোদের নের্তৃত্ব দিচ্ছেন। এছাড়া তিনি সাবর আলী ওরফে সাবু নামে এক ব্যক্তির কাছে তিন লক্ষ টাকায় খালের মাটি বিক্রী করেছেন বলেও স্বীকার করেছেন ক্রেতা সাবর আলী। এর আগে গত ২০ মার্চ সাভার উপজেলার উত্তর কাউন্দিয়া মৌজার আর.এস ৬১৮৩ নং দাগের সরু খাল খননের বিরুদ্ধে আমিনবাজারের এলাকাবাসীর পক্ষে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন খান আঃ রশিদ, মোঃ জশিম উদ্দিন। তাদের পক্ষে ইউসুফ সাহেব নামে এক ব্যাক্তি অভিযোগের কপিটি জমা দেন। অভিযোগের সাথে আর.এস নক্সার কপি সিট ৫ সংযুক্তি করে দেয়া হয়।লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয় সাভার উপজেলাধীন উত্তর কাউন্দিয়া মৌজার আর.এস ৬১৮৩ নং দাগে সরু খালটি অবৈধভাবে খনন করে ইসলাম কোম্পানীর ইটভাটাসহ বিভিন্ন ভাটায় লক্ষ লক্ষ টাকা মাটি বিক্রী করছে পার্শ্ববর্তী বড়দেশী এলাকার মোঃ জুয়েল, শহর আলীর ছেলে সাবর আলী ওরফে সাবুসহ নাম অজানা ব্যক্তিরা। ঘটনাস্থলে গিয়ে পাওয়া যায় অভিযুক্ত সাবর আলী ওরফে সাবুকে। সরকারী খাল ও কৃষি জমির মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাটিতো আমি একা কাটতেছিনা, এখানে ১০-১৫টি গ্রুপে অনেকেই মাটি কাটছে। লুৎফর কোম্পানী, রকিব চেয়াম্যান, সাইদুল ইসলাম, মিন্টু মেম্বারসহ অনেকেইতো মাটি কাটতেছে, তাহলে শুধু আমার নামে অভিযোগ দেয়া হলো কেন? এটা অবশ্যই উদ্দেশ্যমূলক। খালের মাটি কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, খালের মাটি কাটতেছেন আমিনবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রকিব আহমেদ। আমি তার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা দিয়ে খালের কিছু অংশ মাটি কাটার জন্য কিনেছি। এখনও আমি নিজের জমি থেকেই মাটি কাটতেছি খালের মাটি এখনও কাটতে পারিনি। সরকারী খালের মাটি কেন কিনলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাটি যেহেতু বিক্রী করা হচ্ছে আমি না কিনলে কেউ না কেউতো কিনবেই।খালের মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে আমিনবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রকিব আহমেদ বলেন, যারাই ওখানে মাটি কাটছে সবাই আমার এলাকারই লোকজন। তবে আমি কোন মাটির ব্যবসা করিনা। যে আমার বিরুদ্ধে খালের মাটি বিক্রীর অভিযোগ করেছে তাকে আমি চিনিইনা। সাবুতো সাবেক চেয়াম্যানের ভাই বেলায়েতের ব্যবসায়ীক অংশীদার। ওরাইতে এতো বছর ধরে খালের মাটি কেটে ভাটায় বিক্রী করে আসছে। আপনারা তাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন। আমিন বাজার ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার এমআরবি ব্রীকসের মালিক সালাউদ্দিন মিন্টু বলেন, আমার জমির পাশ থেকে এমনভাবে গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে গেছে এখন বৃষ্টি আসলেই জমি ভেঙ্গে পড়ে যাবে। এছাড়া খালের মাটিও অনেক চওড়া করে কাটা হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি আসলে পানির স্রোতে বাঁধ ভেঙ্গে গেলে আমার ভাটাটি ক্ষতিগ্রস্থ্য হবে। আমি বিষয়টি জানিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ করলেও প্রায় দুই মাস হতে চললো এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহন না করায় আমি হতাশ। যদি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও আমরা কোন প্রতিকার না পাই তাহলে এখন কোথায় যাবো। সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply