1. kamruzzaman78@yahoo.com : kamruzzaman Khan : kamruzzaman Khan
  2. ssexpressit@gmail.com : savarsangbad :
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১১ অপরাহ্ন

একটি মামলার ‘পোস্টমর্টেম’

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০২২

বিশেষ প্রতিনিধি : পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে সাভারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ৫২ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে দায়ের করা মামলায় কিছু অসঙ্গতি ফুটে উঠেছে। বিএনপির রাজনীতিতে নেই, ঘটনাস্থলে ছিলেন না, ঘটনার আগে থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এমন ব্যক্তির নাম এজাহারে থাকলেও ওইদিন যারা মূলধারায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের অনেকের নাম নেই এজাহারে। এনিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভেতরে বাইরেও চলছে বিশ্লেষণ। অনেকের মতে, আওয়ামী লীগ বা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মামলা থেকে নাম কাটিয়েছেন অনেকে। আবার কয়েকজন নিষ্ক্রিয় ব্যক্তি মনে করছেন, আগামিতে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সম্ভবনা রয়েছে। এই মুহুর্তে মামলায় নাম থাকলে এতোদিনের নিষ্ক্রিয়তার দায় ছাপিয়ে ‘পরীক্ষিত কর্মীর সনদ পাবেন’- এমন ভাবনা থেকে নিজেরা চেষ্টা তদবির করে এজাহারে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।


মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মারকারিস দাস বলেছেন, ঘটনাস্থলে থাকা ও না থাকা ব্যক্তিদের নাম এজাহারে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তার নজরে এসেছে। তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।


জানা গেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ২ মার্চ বুধবার সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু’র সাভার ব্যাংক কলোনীর বাসভবনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বিএনপির সভা ছিল পূর্বনির্ধারিত। এজন্য প্রস্তুতিও নেয় বিএনপি। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারাও অবগত হয়। ঘটনার দিন কয়েক হাজার নেতাকর্মী বাড়ির ভেতর ও বাইরে অবস্থান নেয়। পুলিশ চাইলে সেখানেই তাদের নিবৃত্ত বা ছত্রভঙ্গ করতে পারতো। চাইলে আগেই পন্ড করতে পারতো সভা। তা না করে সভায় কেন্দ্রীয়, জেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শেষ হওয়া পর্যন্ত পুলিশ ওই বাসার বাইরে অপেক্ষা করে। এরপর বিএনপি এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মিছিল নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে উঠে কয়েকশ গজ এগুতে দেয় পুলিশ। বাধা দেয় রাজালাখ ফার্মের সামনে, এতে বাধে সংঘর্ষ-হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।

এর জের ধরে মামলা করে পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের কৌশুলে পা দিয়ে মামলার ফাঁদে আটকেছে বিএনপি!
এজাহারের তথ্যমতে, আশুলিয়া থানা ছাত্রদল নেতা মো. জালাল উদ্দিন ভূঁইয়া, আশুলিয়া থানা যুবদল নেতা মো. জাহিদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কাবির রিজভী, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী, ঢাকা জেলা বিএনপি সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, ঢাকা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কফিল উদ্দিন, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক, সাভার পৌর বিএনপির সভাপতি খন্দকার মইনুল হাসান খান বিল্টু, পৌর বিএনপি নেতা ওবায়দুর রহমান অভি, সাভার উপজেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু মিয়া, সাভার উপজেলা যুবদল সভাপতি মোশারফ হোসেন মোল্লা, সাভার পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন বেপারী, সাভার উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির, ঢাকা জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি আমজাদ হোসেন, সাভার উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম সাইফুদ্দিন, সাভার পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. একলাছ উদ্দিন, সাভার থানা বিএনপি যুগ্ম-আহবায়ক মো. আব্দুল্লাহ আবুল খায়ের, সাভার থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাভার থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মো. সাইদুল ইবনে হাসিব সোহেল, সাভার থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মো. আবু সাঈদ, সাভার থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মিনহাজ উদ্দিন বাদল, সাভার থানা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আরিফুর রহমান, সাভার থানা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আনোয়ার হোসেন, সাভার থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুস সালাম মোল্লা, সাভার থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আব্দুল আলীম, সাভার থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ আবদুল বারেক, সাভার থানা বিএনপি যুগ্ম-আহবায়ক মো. আমির শিরালি, সাভার থানা বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক আসাদুজ্জামান ইউসুফ, সাভার থানা বিএনপি সদস্য সচিব মো. গোলাম মোস্তফা, বনগাঁও ইউনিয়ন বিএনপি ১ম যুগ্ম আহবায়ক মো. তৈয়ব আলী, বনগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফিরোজ খান, বনগাঁও ইউনিয়ন বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সানাউল্লাহ, বনগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ রফিক মেম্বার, বনগাঁও ইউনিয়ন বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক মো. আব্দুল্লাহ, বনগাঁও ইউনিয়ন বিএনরি যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বাবু, বনগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ নাসিরুল ইসলাম নাসিম, বনগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ হাফিজ উদ্দিন, সাভার পৌর শ্রমিকদল সভাপতি মো. কামাল হোসেন, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান অভি, আশুলিয়া থানা বিএনপি নেতা ও ধামসোনা ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল গফুর, আশুলিয়া থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রানা, স্বেচ্ছাসেবক দল সদস্য শরিফুল ইসলাম, আশুলিয়া থানা বিএনপির আহ্বায়ক ও পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজগর হোসেন, ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রদল আহ্বায়ক তমিজ উদ্দিন তানভীর, ঢাকা জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক হিমেল, সাভার পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর আব্দুর রহমান, সাভার পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ ইউসুফ, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি রাজু আহমেদ, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেন, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল পাশা, সাভার থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. মমিনুল ইসলাম ও একই পদধারী মো. আলমগীর হোসেন প্রিন্সের নাম রয়েছে এজাহারে পর্যায়ক্রমে।

মামলায় অসঙ্গতি: গত ২ মার্চ বুধবার দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার রাজালাখ ফার্মের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সৃষ্ট ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সাভার পৌর বিএনপির সদস্য সচিব বদিউজ্জামান বদির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকে নিয়ে অন্যত্র সরে যাচ্ছেন। এরআগে বদির ডা. সালাউদ্দিনের বাড়ির ভেতরে অনুষ্ঠিত সভা কিছু সময় পরিচালনা করেন। কিন্তু এজাহারে তার নাম নেই। ধামরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, বিএনপির কেন্দ্র্রীয় কমিটির সদস্য, ঢাকা জেলার সহসভাপতি ও ধামরাই থানা শাখার আহবায়ক তমিজ উদ্দিন সভায় বক্তব্য রাখেন, কিন্তু মামলায় তার নাম নেই। ধামরাই পৌর বিএনপির সদস্য সচিব আতিকুর রহমান আতিক, ধামরাই থানা বিএনপির সদস্য সচিব শামসুল ইসলাম, ধামরাই থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রাকিব খান ফরহাদ, ঢাকা জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আব্দুর রহমান বাবুল, ঢাকা জেলা তাঁতী দলের সভাপতি জাকির হোসেন, ঢাকা জেলা যুবদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সুরুজ্জামান, সাভার পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল্লাহ, সাভার থানা সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নাজমুল আলম খান, ঢাকা জেলা মহিলা দলের সাবেক আহবায়ক সাবিনা ইয়াসমিন ও সাভার পৌরসভার একজন নারী কাউন্সিলর পুরো কর্মসূচীতে তৎপর ছিলেন। কিন্তু এদের কারো নাম নেই এজাহারে। অথচ ৩৯ নম্বর বিবাদির ঠিকানা চিহ্নিত করতে ওই নারী কাউন্সিলরের বাড়ির পাশে বাসা এমন উল্লেখ রয়েছে!

 

এদিকে মামলার ৬ নম্বর আসামি ঢাকা জেলা বিএনপির সহ সভাপতি, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন একটি আইসিটি এ্যাক্টের মামলার আসামি হিসেবে পুলিশের খাতায় পলাতক। ঘটনার দিন তিনি কর্মসূচীতে ছিলেন না। ৯ নম্বর আসামি ওবায়দুর রহমান অভি কয়েক বছর আগে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছেন তিনি আর বিএনপির রাজনীতি করেন না। ঘটনার দিন তিনি কর্মসূচীতে ছিলেন না বলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা নিশ্চিত করেছেন। ১০ নম্বর আসামি মঞ্জু মিয়া ঘটনার একদিন আগে রাতে বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থেকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন তাকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তার হার্টে রিং পড়ানো হয়েছে। ১১ নম্বর আসামি মোশারফ হোসেন মোল্যা অসুস্থ হয়ে শয্যাশয়ী, রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। ১৭ নম্বর আসামি আব্দুল্লাহ আবুল খায়ের ঘটনার দিন পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বনভোজনে ছিলেন। ১৯ নম্বর আসামি হাসিব ইবনে সোহেল ঘটনাস্থলে ছিলেন না, মামলা রেকর্ডের পরই রাতে তাকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১২ নম্বর বিবাদি আক্তার হোসেন দলিল লেখক, তার দাবি তিনি ওইদিন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদন করেছেন। দলের কর্মসূচীতে যাননি।

প্রসঙ্গত, ঘটনার পরদিন ৩ মার্চ সাভার মডেল থানার এসআই নুরুল কাদের সৈকত বাদি হয়ে দায়েরকৃত ১১ নম্বর মামলার ধারা ১৪৩/৩৩২/৩৩৩/৩৫৩/১৮৬/৪২৭/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০। ঘটনাস্থল থেকে জালাল উদ্দিন ভুইয়া (২২) ও জাহিদ (৩২) আটক বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বেআইনী জনতাবদ্ধ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি কাজে বাধা দিয়ে সাধারণ ও গুরুতর জখম করাসহ ২০ হাজার টাকা মূল্যমানের মালামাল ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ :