1. kamruzzaman78@yahoo.com : kamruzzaman Khan : kamruzzaman Khan
  2. ssexpressit@gmail.com : savarsangbad :
সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৭ অপরাহ্ন

আশুলিয়ায় বৃষ্টি হত্যার রহস্য উদঘাটন, স্বামী গ্রেফতার

  • আপডেট সময় : সোমবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২২

আশুলিয়া প্রতিনিধি : আশুলিয়ার কাঠগড়া সরকারবাড়ী এলাকার একটি ভাড়া বাড়ির একটি কক্ষ থেকে গত ১৫ জানুয়ারি দুপুরে বৃষ্টি আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় ওই দিন রাতেই আসাদুলসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়। ওই ঘটনায় র‌্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে হত্যার মূল অভিযুক্ত আসাদুলকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে বৃষ্টিকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে। পারিবারিক কলহ, স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের জেরে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের মেয়ে বৃষ্টি আক্তারের। প্রথম ঘরের দুই মেয়েকে বড় বোনের কাছে রেখে গাজীপুরে গার্মেন্টেসে চাকরি নেন। সেখানেই পরিচয় হয় আসাদুল ইসলামের সঙ্গে। তার প্ররোচনায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু দ্বিতীয় স্বামী আসাদুলেরও অনৈতিক কাজ, যৌতুকের জন্য চাপ আর বেতনের টাকা আত্মসাৎ ঘিরে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। পারিবারিক কলহ ও দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আশুলিয়ার কাঠগড়া সরকারবাড়ী এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বৃষ্টি আক্তারকে (২৩) শ্বাসরোধ করে হত্যার পর পালিয়ে যায় আসাদুল ইসলাম (২৬)। ঘটনার পর কেউ জানত না বৃষ্টি খুন হয়েছে। দুদিন পর বৃষ্টির পরিবারের উপস্থিতিতে মরদেহ উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। ঘটনার চাঞ্চল্যতায় ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব-৪। ৩০ জানুয়ারী রবিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বৃষ্টি আক্তার হত্যা মামলার প্রধান আসামি স্বামী আসাদুলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪ এর একটি দল। সোমবা ৩১ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি দুপুরে আশুলিয়ার কাঠগড়া সরকারবাড়ী এলাকার একটি ভাড়া বাড়ির একটি কক্ষ থেকে বৃষ্টি আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় ওই দিন রাতেই আসাদুলসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়। ওই ঘটনায় র‌্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে হত্যার মূল অভিযুক্ত আসাদুলকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে বৃষ্টিকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নিহত বৃষ্টি আক্তার (২৩) কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানাধীন এলাকার মেয়ে। ২০১২ সালে বৃষ্টির প্রথম বিয়ে হয়। প্রথম স্বামীর সংসারে তার ৬ বছর ও ৪ বছরের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০১৯ সালে প্রথম স্বামী অন্য এক নারীকে বিয়ে করলে বৃষ্টির সঙ্গে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। একপর্যায়ে প্রথম স্বামী বৃষ্টিকে তালাক দেয়। ডিভোর্সের পর বৃষ্টি গাজীপুরে তার বোনের সঙ্গে থেকে গার্মেন্টেসে চাকরি করার সময় আসামি আসাদুলের সঙ্গে পরিচয় হয়। ধূর্ত আসাদুল বৃষ্টির আগের স্বামী থেকে ডিভোর্স বাবদ পাওয়া টাকা আত্মসাতে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে এবং একপর্যায়ে ভিকটিমকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ২০২০ সালে ১ লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে বৃষ্টিকে বিয়ে করে। মোজাম্মেল হক বলেন, পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে বিয়ের আগে আসাদুল বৃষ্টির প্রতি অনেক যত্নশীলতা ও সহমর্মিতা দেখাত। কিন্তু বিয়ের পরপরই তার রূপ পাল্টে যায়। সে বৃষ্টির আগের স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর প্রাপ্ত অর্থ এবং মাসিক বেতনের ওপর লোভাতুর দৃষ্টি দেয়। বিয়ের পর তারা গাজীপুরে থাকা অবস্থায় তাদের মাঝে মাঝেই কলহ হতো। পরে তারা গাজীপুর থেকে আশুলিয়ায় এসে একটি গার্মেন্টেসে চাকরি নিয়ে গার্মেন্টসের কাছে বাসা ভাড়া নেয়। তারা দুজনেই একই মোবাইল ব্যবহার করত এবং তাদের বেতনের টাকা সেই মোবাইলেই আসত। বৃষ্টি সেখানে বেতন পেত ১৮ হাজার টাকা। আর আসাদুল বেতন পেত ১২ হাজার টাকা। বৃষ্টির সেই বেতনের ১৮ হাজার টাকা আসাদুল নিজে উত্তোলন করত। বৃষ্টিকে কোনো টাকা দিত না। এমনকি হাত খরচের টাকাও দিত না। পুরো টাকা নিজে আত-¥সাৎ করত। বৃষ্টির প্রথম পক্ষের দুই সন্তান থাকায় তাকে সন্তানদের খরচ চালাতে আসাদুলের কাছে বেতনের টাকা চাইলে কোনো টাকা -দিত না। ঘটনার গত তিন/চার মাস আগে স্বামী আসাদুল একাধিক পরনারীতে আসক্ত হওয়ার তথ্য বৃষ্টি জেনে যাওয়ায় সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আশুলিয়ায় আসাদের পরকীয়াকে কেন্দ্র করে তারা বাসা পরিবর্তন করে বর্তমান বাসায় আসে। তবে আসাদুল অন্য মেয়েদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে, ইমো ভিডিও কল ও মেসেঞ্জারে যোগাযোগ রাখত।ঘটনার দিন ১৩ জানুয়ারি রাত ১২টার দিকে আসাদুল বাসায় ফিরলে বৃষ্টি আসাদের মোবাইলে অন্য নারীর অপ্রীতিকর ছবি ও কথোপকথন দেখতে পেয়ে রাগারাগি করে। একপর্যায়ে আসাদুরের মোবাইল ভেঙে ফেলে। আসাদুলও ক্ষিপ্ত হয়ে বৃষ্টির কিস্তির টাকায় কেনা টিভি ভেঙে ফেলে। ঝগড়ার একপর্যায়ে আসাদুল বৃষ্টির গলাটিপে ধরে, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে বৃষ্টিকে হত্যা করে। পরে মরদেহ সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দেয়। ঘটনাটি অন্যভাবে সাজানোর জন্য সে ঝুলন্ত মরদেহটি সিলিং ফ্যান থেকে নামায় এবং তার পরিহিত লুঙ্গি দিয়ে মৃত ভিকটিমের মুখ ঢেকে রেখে নিজের মা ও ফুপুকে ঘটনাটি জানিয়ে ঘরে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায় আসাদুল। পরদিন ১৪ জানুয়ারি বিকেল ৪টারদিকে এক ফুপু নিহতের বড় বোন আকলিমাকে মোবাইলে কল করে জানায় বৃষ্টি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে, আসলেই দেখতে পাবেন। এ কথা বলে তিনি মোবাইল বন্ধ করে রাখেন। একই দিন সন্ধ্যার দিকে আসামির মা ভিকটিমের পরিবারকে মোবাইলে কল করে বলে ভিকটিম বৃষ্টি মারা গেছে। এরপর তিনিও মোবাইল বন্ধ করে রাখেন। নিহতের পরিবার বাসা পরিবর্তনের কারণে নতুন বাসার ঠিকানা জানতেন না। নিহতের ভাই গাজীপুর থেকে আশুলিয়ায় এসে সন্ধ্যা থেকে সারারাত অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বৃষ্টির কোনো ঠিকানা না পেয়ে আশুলিয়া থানায় যোগাযোগ করে। পরদিন ১৫ জানুয়ারি আসাদুলের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে গিয়ে বৃষ্টি ও আসাদুলের বর্তমান ঠিকানা জেনে আসে। পরে ভিকটিমের ভাই ও খালাত ভাই ঠিকানা অনুযায়ী আশুলিয়ায় সরকার বাড়িতে গিয়ে দরজা তালাবদ্ধ দেখতে পায়। তারা দরজার নিচের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পা দেখতে পেয়ে আশুলিয়া থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে বৃষ্টির মরদেহ উদ্ধার করে। থানা পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে ভিকটিমে শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, শ্বাসরোধ করে ভিকটিমকে হত্যা করা হয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়া গেলে হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে। তবে র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসাদুল বৃষ্টি হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ :