সংবাদ রিপোর্ট:সাভারের ১১টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও অনেকে জয়-পরাজয়ের অঙ্ক মেলাতে পারছেন না। যোগ-বিয়োগ মেলাতে তাদের হিমশিম দশা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যারা জয়ী হয়েছেন ভোটের ব্যবধানের হিসাব মেলাতে তাদেরও ত্রাহি দশা।এরমধ্যে পাঁচ ইউনিয়নে ভোটে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে পুন:নির্বাচনের লিখিত আবেদন করেছেন পাঁচজন পরাজিত প্রার্থী। নির্বাচন কমিশন তাদের আবেদন আমলে নিয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিল। এতে আটকে যায়পাঁচ ইউনিয়নের গেজেট প্রকাশ কার্যক্রম। তবে, ২৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার সাভারের ১১ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী মেম্বার পদে বিজয়ীদের গেজেট প্রকাশ হয়েছে। ২৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা জেলা প্রশাসক অফিসে তাদের শপথ গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, আমিনবাজার ইউনিয়নে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহাবুব উল্লাহ, বনগাঁও ইউনিয়নে আওলাদ হোসেন, বিরুলিয়া ইউনিয়নে সাইদুর রহমান সুজন, আশুলিয়া ইউনিয়নে হেলাল উদ্দিন মাদবর এবং কাউন্দিয়া ইউনিয়নে আতিকুর রহমান খাঁন শান্ত সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ফলাফল বাতিল করে পুন:নির্বাচনের আবেদন করেন। তারা কেন্দ্র ভিত্তিক অনিয়মের অভিযোগ আবেদনে উল্লেখ করেন। এতে জোর করে ব্যালটে সিলমারার অভিযোগ ছিল উল্লেখযোগ্য। তাদের অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এতে ওই পাঁচ ইউনিয়নের গেজেট প্রকাশ ঝুলে যায়।
এদিকে ওই পাঁচ ইউনিয়নে বিজয়ীরা গেজেট প্রকাশে বিলম্বের ব্যাপারে খোঁজখবর করে আপত্তির ব্যাপারে জানতে পারেন। আপত্তি অসত্য এবং উদ্দেশ্যপ্রোনোদিত উল্লেখ করে তারা এর বিরুদ্ধে আপীল আবেদন করেন। অবশেষে ২৫ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ হওয়ায় এর নিষ্পত্তি হয়েছে। অবশ্য আপত্তিকারীরা আদালতের শরনাপন্ন হতে পারেন বলে জানা গেছে।
একাধিক সূত্র মতে, পাশাপাশি দুটি ইউনিয়ন বিরুলিয়া ও আশুলিয়া। গত ৫ জানুয়ারি বুধবার অনুষ্ঠিত পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত হলেও পাশের বিরুলিয়া ইউপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।আশুলিয়া থেকে বিজয়ী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য শাহাব উদ্দিন। বিরুলিয়ায় বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি (বহিস্কৃত) সেলিম মণ্ডল। বিরুলিয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান সুজন।পাশাপাশি দুটি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের জয় ও পরাজয়কে ভোটকেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার সুযোগ পাওয়া না-পাওয়াকে দায়ী করছেন পরাজিত প্রার্থী ও তার সমর্থকেরা। তারা মনে করেন, কর্মীরা ভোটকেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার সুযোগ পাওয়ায় আশুলিয়া ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জয় হয়েছে। আর বিরুলিয়ায় ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার সুযোগ না পেয়ে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।বিরুলিয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পরাজয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিজয়কে ভালো চোখে দেখছেন না সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলা। ভোটের দিন আশুলিয়া ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে হতাশা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। ভোটের দিন সকাল ১০টার দিকে আশুলিয়া ইউনিয়নের আশুলিয়া স্কুল কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সামনেই প্রার্থীদের কর্মীরা ব্যালট পেপারে নৌকা ও বল প্রতীকে সিল মারেন। ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী লেহাজ উদ্দিন তাঁদের হাতেনাতে ধরে ফেলেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ সিল মারার কথা স্বীকার করেন।আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ও সমর্থকেরা একই কেন্দ্রের ২ নম্বর ভোটকক্ষে ঢুকে ব্যালট বই ছিনিয়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারেন। ওই কক্ষের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আলী আকবর এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। পাশের আশুলিয়া কলেজ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, প্রমাণ ও অভিযোগ থাকার পরও ওইসব কেন্দ্রের ভোট বাতিলসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।তবে বিরুলিয়ায় প্রশাসন ছিল ব্যতিক্রম। এই ইউপির কাকাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপারে সিল মারার সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তার নির্দেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইদুর রহমান সুজনকে আটক করা হয়। পরে তার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।পাশের ভবানিপুর স্কুল কেন্দ্রে সিল মারতে গিয়ে জনতার তোপের মুখে পড়েন সাইদুর রহমান সুজন। জনতার তাড়া খেয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে আশ্রয় নিলে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চেয়েও পাননি তিনি। অবশেষে সুজন জানালা ভেঙে পালিয়ে যান।আশুলিয়া ইউনিয়নের পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজু আহম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, ভোটকেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার সুযোগ পাওয়ায় ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। একই অভিযোগ করেছেন ওই ইউনিয়নের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হেলাল উদ্দিন।তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহাব উদ্দিন মাদবর বলেন, জনতার ভোটে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। কোনো কেন্দ্রে জোর করে সিল মারার ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে বিরুলিয়ায় পরাজিত নৌকার প্রার্থী সাইদুর রহমান সুজন বলেন, ‘আমার বিজয় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু মেকানিজম করে আমাকে হারানো হয়েছে।’ তবে কারা মেকানিজম করেছেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।তবে বিজয়ী প্রার্থী সেলিম মণ্ডল বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট হওয়ার সুবাদেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও তিনি বিজয়ী হয়েছেন।পাশাপাশি দুটি ইউনিয়নের একটিতে নৌকার জয়, অপরটিতে পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসিনা দৌলা বলেন, ‘কারণ সবারই জানা। বিরুলিয়া ইউনিয়ন থেকে সুজনের বের হয়ে আসার (পাস করার) কথা ছিল। সেখানে কী হলো না-হলো, বলতে পারছি না। যিনি (সেলিম মন্ডল) চেয়ারম্যান হয়েছেন, তিনি আমাদের দল ও বিরুলিয়াবাসীর জন্য ভালো হবেন না।’
Leave a Reply